ভারতের নারী এবং তাদের প্রতিবিপ্লব
ড. বি.আর. আম্বেদকর
অনুবাদঃ মনোহর মৌলি বিশ্বাস
[‘ভারতের নারী এবং তাদের প্রতিবিপ্লব’ এই শিরোনামের একটা লেখা পাওয়া গেছে ড. বি. আর. আম্বেদকরের। এই একই নিবন্ধের অন্য জায়গায় শিরোনাম দেওয়া আছে ‘The riddle of the women.ড. বাবাসাহেব আম্বেদকরের ‘রাইটিংস এন্ড স্পিসেস’ শিরোনামের গ্রন্থসমুহের সম্পাদকীয় দপ্তর ‘ভারতের নারী এবং তাদের প্রতিবিপ্লব’ শিরোনামের লেখাটি ড. আম্বেদকরের “Riddles in Hinduism’ এই গ্রন্থের অন্তর্গত না রেখে ড. আম্বেদকর রচনাবলীর তৃতীয় খন্ডের অন্তর্গত রেখেছেন।]
মনু হিন্দুদের শুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি যে কঠোর নিয়মকানুন দেখিয়েছেন, হিন্দু নারীদের প্রতি তিনি সে তুলনায় ছিলেন নরমপন্থী এবং কোমল হৃদয়, তা একেবারেই বলা যাবে না। নারীদের নিচু মনোভাবের কথা দিয়েই তিনি শুরু করেছেন তার কথা। তিনি বলেছেনঃ
২/২১৩- নারী জাতির স্বভাব হল পুরুষদের লোভানো। এই পৃথিবীতে সেই জন্যেই পুরুষ মানুষ নারীদের সাহচর্যে গেলেই নিরাপদহীন হয়ে পড়ে না।
২/২১৪- শুধু মুর্খ পুরুষদের তারা বিপথে নিয়ে যায়, ব্যাপারটা এমন নয়। শিক্ষিত পুরুষদেরও তারা বাসনা এবং ক্রোধের দাস বানিয়ে ফেলে।
২/২১৫- কারও মা বোন বা কন্যার সাথে নির্জনে কোথাও বসবে না। কারণ অনুভূতি বড় শক্তিশালী এবং শিক্ষিত মানুষকেও তা বসে আনে।
৯/১৪- মেয়েরা জপের তোয়াক্কা করে না। বয়সের দিকেও মনযোগ থাকে না তাদের। ‘সে একজন পুরুষ’ এ কথাটাই তার পক্ষে যথেষ্ট। রুপের কাছে যেমন ধরা দেয়, কুৎসিতকেও গ্রহন করে সে।
৯/১৫- পুরুষকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার ভিতর দিয়ে যেমন, ঘন ঘন মেজাজ বদলের মধ্য দিয়েই তাদের সহজাত হৃদয়হীনতার কারণে তারা স্বামীর প্রতি অকারণে অবাধ্য হয়ে ওঠে। এই ধরায় স্বজত্নে রক্ষা করতে হয় তাদের।
৯/১৬- জীবের সৃষ্টিকারী যে ভাবে নারী চরিত্র সৃষ্টি করে দিয়েছে, সত্যি কথা বলতে কি, প্রত্যেকটা পুরুষকে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাদের রক্ষা করা দরকার।
মনু যখন সৃষ্টি করেছে নারীদের শয্যার প্রতি ভালবাসা, বসার স্থানের প্রতি ভালবাসা, গহনাপত্রের প্রতি ভালবাসা, অবৈধ আকাঙ্ক্ষা পুরণ, মাত্রারিতিরিক্ত ক্রোধ, অসততা, বাজে কাজ ও কুবৃত্তি সবই দিয়েছে তাদের।
নারীদের প্রতি মনু যে মতামত দিয়েছেন বা আইন প্রণয়ন করেছেন, তা বলছে এসব কথা। কোনও প্রকারেই নারী জাতিকে স্বাধীনতা দেওয়া যাবে না। মনুর অভিমত হলঃ
৯/২- দিনে রাতে সব সময়েই নারীকে পুরুষ নির্ভরশীল করে রাখতে হবে। পারিবারিক জীবনে সে পুরুষের অধীন এবং পুরুষেরা যদি নারীকে তাদের যৌন সম্ভোগে ব্যবহার করে নারী নিশ্চয়ই যে কোনও একজনের অধীনে থাকবে।
৯/৩- নারীকে তার বালিকা বয়সে রক্ষা করবে তার বাবা। তার স্বামী রক্ষা করবে তার যৌবনে। বৃদ্ধ বয়সে রক্ষা করবে তার পুত্রেরা। নারী কখনোই স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্য নয়।
৯/৫-নারীকে তার কুপ্রকৃতি থাকে নিশ্চিত ভাবে রক্ষা করতে হবে যতই তুচ্ছ কার হোক। আর তা না করলে দুটো পরিবারেই নেমে আসবে দুঃখ।
৯/৬- হিন্দুদের যে চারটি বর্ণ আছে, তার প্রত্যেককে করতে হবে এ কাজটি। স্বামী যতই দুর্বল হোক না কেন, সে প্রহরা দেবে তার স্ত্রীকে।
৪/১৪৭- নারীকেবালিকা বয়স থেকে যৌবনপ্রাপ্ত হোক অথবা হোকনা বৃদ্ধা একজন, সে স্বাধীন ভাবে কোনও কাজ করবে না। নিজের বাড়িতেও না।
৫/১৪৮-বালিকা বয়সে সে থাকবে পিতার বসে, যৌবনে স্বামীর বসে, স্বামী না থাকলে পুত্রদের বসে। কখনও স্বাধীন ভাবে থাকবে না।
৫/১৪৯- নারী কখনও তার পিতার থেকে, স্বামীর থেকে বা পুত্রদের থেকে আলাদা হয়ে থাকার চেষ্টা করবে না। আর যদি সে করে, সে নিজেকে, তার স্বামীকে করে তুলবে ঘৃণার পাত্র।
৯/৪৫- নারীকে বিবাহ বিচ্ছেদের কোনও অধিকার দেওয়া হল না। স্বামীকে স্ত্রীর সাথে থাকার একমাত্র ব্যক্তি হিসাবে ঘোষনা করা হল। নারীর একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর কোনও ভাবেই সেই বিয়ের বাঁধন কাটা যাবে না।
বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপারে মনুর এই আইন বা বিধানকে বহু হিন্দুই চুড়ান্ত বলেই বলে থাকেন। বিবাহ মানুষের জীবনের এক ধর্মাশ্রয়ী পবিত্র বিধান। সেই বিধানের অনুবর্তী হয়ে মনুর বিধানকে তারা করে তোলে প্রতিমা পুজোর মত। তার বিচ্যুতি ঘটাতে নারাজ। বিবাহের পবিত্র বাঁধন একবার তৈরি হলে তা আর কোনও ভাবেই ছিন্ন করা যাবে না। ব্যাপারটা জীবনের বাস্তব থেকে বহু দূরে। বিবাহ বিচ্ছেদের এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল পুরুষকে নারীর সাথে বেধে না রেখে নারীকে পুরুষের সাথে রাখা এবং যুক্ত করে রাখা।
স্ত্রীকে ত্যাগ করার ব্যাপারে মনু কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন নি। পুরুষকে তার স্ত্রী ত্যাগ করার শুধু অনুমতি দিয়েছে তাই নয়, পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রি করে দিতে পারবেসে অনুমতি তার আছে। মনু যেটা করেছে তা হল নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।
দেখুন মনু আরও কি সব বলেছেঃ
৯/৪২- বিক্রি করে দিলেও বা পরিত্যাগ করে দিলেও স্বামীর হাত থেকে রেহাই নেই স্ত্রীর। একথার মানে হল, সে এবংবিধ করার পরেও অন্য কারও বৈধ স্ত্রী হতে পারবে না। বিক্রি করার পর তাকে, অথবা পরিত্যাগ করার পরে তাকে যে ব্যক্তি অধিগ্রহনে নেবে, তাকে স্ত্রী করতে পারবে না।
এটা যদি দুর্বৃত্তের কাজ না হয় তা হলে দুর্বৃত্ততা কি? মনুর আইন নীতিযুক্ত বা নীতিহীন তা নিয়ে মনুর কোনও মাথাব্যথা ছিল না। কোনও ভাবনা ছিল না তার। আর যেটা মূল লক্ষ্য ছিল, তা হল নারীর স্বাধীনতা হরণ করে নাও। বুদ্ধের আমলে নারীদের যে স্বাধীনতা ছিল, কেড়ে নাও সে স্বাধীনতা।
নারীকে পরিনত করেছিল ক্রিতদাসীতে। সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল তাকে।
৯/৪১৬- তিনজনের কোনও সম্পদ থাকবে না, বলেছিল মনু। কারা সেই তিনজন? স্ত্রী, পুত্র এবং দাস। তারা যে সম্পদ অর্জন করবে, তা সব মালিকের তার কারণ তারা তিনজনই তো তার অধীনে আছে।
স্ত্রী যখন বিধবা হয়ে যাবে, স্ত্রী স্বামীর সম্পদ থেকে ভরণপোষন পাবে। স্বামীর সংসার যদি আলাদা হয়ে থাকে তার পরিবার থেকে, তাহলে সে ওই সম্পদের মালিক হবে। কিন্তু মনু কখনও স্ত্রীকে সম্পদ যথেচ্ছ ব্যবহারের ক্ষমতা দেননি।
স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতনের শাস্তি দেবার অধিকার প্রদত্ত হয়েছে মনুর অইনে। মনুর বিধানে স্ত্রীকে তার স্বামী প্রহার করতে পারবে সে ক্ষমতাও দিয়েছে।
৮/২১৯- কি স্ত্রী, কি পুত্র, কি চাকর, কি অধস্তন লোক, কি নিজের রক্তের ভাই, এদের কেউ ভুল কোনও করলে তাকে হয় চাবুক মারবে না হয় দোফালা বাঁশ দিয়ে পেটাবে।
অন্য সব ব্যাপারে মনু নারী এবং শুদ্রদের একই অবস্থায় রাখতে বলেছে। নারীদের বেদপাঠ নিষিদ্ধ করেছে মনু। যেমনটা করা হয়েছে শুদ্রদের বেলায়।
২/৬৬- নারীর সংস্কার করাটা জরুরী, এবং তা করা উচিত বেদের কোনও মন্ত্র উচ্চারণ না করেই।
৯/১৮- নারীদের বেদ পাঠের অধিকার নেই। সে কারনেই তাদের সাংস্কার বেদ পাঠ না করেই করতে হবে। নারীর ধর্ম সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই। কারণ তাদের তো বেদ পাঠের মধ্যে প্রবেশ করতেই দেওয়া হয় না। পাপ দূর করতে বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করা প্রয়োজন। আর যেহেতু নারীরা বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারে না, সেই হেতু তারা অসত্যের মত অপবিত্র ও নোংরা।
ব্রাহ্মণের ভাষ্য অনুসারে যাগযজ্ঞ হল ধর্মের মূল আত্মা। এতদ্সত্বেও মনু তাদের সে অধিকার দেয়নি। মনু তাদের নির্দেশ দিয়েছেঃ
৯/৩৬- বেদের কথকথা অনুসারে প্রত্যেকদিন যে যাগযজ্ঞ করার কথা, নারীরা তা করবে না।
৯/৩৭- তা সত্বেও নারী যদি তা করে, তবে সে নরকে যাবে। যাগযজ্ঞ থেকে নারীকে বিরত থাকার জন্যে পুরোহিতরা পালন করবে ভূমিকা। তারা কোনও ভাবে সাহায্য করবে না নারীকে।
৪/২০৫- নারীরা যাগযজ্ঞ করলে ব্রাহ্মণ আর কখনও তার আহার্য গ্রহণ করতে পারবে না।
৪/২০৬- নারীরা যাগযজ্ঞ করলে সেটা অশুভ। ঈশ্বর তা গ্রহণ করবে না। অতঃপর নারীদের সেটা ত্যাগ করা উচিত।
নারীদের কোনও মেধাবৃত্তি নেই, স্বাধীন ইচ্ছা নেই, চিন্তাশক্তি নেই। বৌদ্ধ ধর্মের মত কোন জ্ঞান পদ্বতি গোষ্ঠিতে তারা যেতে পারবে না। যদি তারা অমৃত্যু এই অবস্থার মধ্যে থাকে, মানুষের মৃত্যুকালে যেমন তার মুখে এক চামচ জল দেওয়া হয়, নারীদের বেলায় বোধকরি তাও ঘটবে না।
মানুষের জীবনের আদর্শ সম্পর্কে যে ধারণা শেষমেষ মনু নারীদের সামনে রেখেছে, তার নিজের কথায় বলা বোধকরি ভাল হবেঃ
৫/১৫১- সেই সে ব্যাক্তি, যার হাতে তার পিতা তাকে অর্পণ করে দেয় বা দিতে পারে অথবা তার বাবার অনুমতি নিয়ে ভাইকেও অর্পণ করে দেয়, নারী তার কথা মেনে চলবে এবং যতদিন মানুষটি বেঁচে থাকবে, ততদিন মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওই ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটলে তাকে কোনও ভাবেই অপমান বা বিদ্রুপ করা যাবে না।
৫/১৫৪- স্বামী ছেড়ে চলে গেলেও বা অন্য কোথাও সুখ খুঁজে বেড়ালেও বা নির্গুন কোন ব্যক্তি হলেও তাকে দেবতার আসনে বসিয়ে পুজো করতে হবে এবং অনুগত স্ত্রী হিসেবে করতে হবে সে কাজ।
৫/১৫৫- কোনও যাগযজ্ঞ করবে না, কোনও উপাসনা করবে না, কোনও উপবাস ব্রত পালন করবে না। স্বামীকে দূরে রেখে এসব করা যাবে না। যদি কোন নারী স্বামীকে মান্যতা দিয়েই করে এসব সেই কারণ হেতু স্বর্গে সানন্দে জায়গা হবে তার।
সেটাই হবে সব থেকে পছন্দের গ্রন্থ বা বই, মনু যেখানে নারীদের অন্য নিম্নরূপ সরস আদর্শের কথা উল্লেখ রেখেছেঃ
৫/১৫৩- যে স্বামী পবিত্র মন্ত্র পড়ে বিবাহ করেছে তাকে সেই স্বামীই সব সময়ই তার সুখের উৎস। এই ইহকালে অথবা পরকালে। কারণে বা কারণ বিহীনে।
৫/১৫০- স্ত্রীকে সব সময় প্রসন্ন থাকতেই হবে। চতুরতার সাথে সামলাবে সব গৃহকর্ম, বাসনপত্র মাজবে পরিচ্ছন্নভাবে, সংসার নির্বাহ করবে ব্যয়বহুল্য বর্জন করে।
হিন্দুরা মেয়েদের এই আদর্শকে সবথেকে বড় বলে ভাবে।মনুর সময়ে মেয়েদের এই আদর্শকে তার আগেকার সময়ের মেয়েদের সাথে একবার তুলনা করা যেতে পারে।
অথর্ববেদ থেকে একথা পরিষ্কার, তখন মেয়েদের উপনয়ন হত। ব্রহ্মচর্য পালন শেষে মেয়েরা উপযুক্ত হত বিবাহের। শৌতসূত্র থেকে একথা পরিষ্কার যে মেয়েরা পাঠ করত বেদমন্ত্র। মেয়েদের বেদ পাঠের শিক্ষাও দেওয়া হত। পানিনির অষ্টাধ্যায়ীতে প্রমাণ আছে যে মেয়েরা পাঠ শিক্ষার জন্য যেত গুরুকুলে এবং বেদের বিভিন্ন শাখার অধ্যায়ন করত। তারাই দক্ষ হয়ে উঠেছিল মীমাংসা সূত্রের। পতঞ্জলির মহাভাষ্য দেখিয়েছে যে নারীরা শিক্ষিকার কাজ করত এবং তারাই শিক্ষয়িত্রী ছিল মেয়েদের। পুরুষদের সাথে তারা ধর্মশাস্ত্র, দর্শনশাস্ত্র এবং পরাবাস্তবের প্রখর জটিল বিষয়গুলি নিয়ে যে আলোচনা করত সে বিষয়ে সমূহ কিছু কম ছিল না। জনক এবং সুলতার মধ্যে যাজ্ঞবল্ক ও গার্গীর মধ্যে, যাজ্ঞবল্ক ও মৈত্রেয়ীর মধ্যে এবং শংকরাচার্য ও বিদ্যাধরীর মধ্যে যে তর্ক বিতর্ক ও আলোচনার উল্লেখ পাওয়া যায় যা মনুর কালের পূর্ববর্তী ভারতের কালের জ্ঞানের প্রাকর্ষ ও পাঠের সৌকর্ষের অত্যুচ্চতার প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরা যায়।
প্রাক মনুর কালের নারীরা যে সম্মানের স্থানে ছিল তা নিয়ে কোন তর্ক করা চলে না। প্রাচীন ভারতে নারীরা রাজার রাজ্য অভিষেকের সময় মহিমাময় স্থান দখল করেছিল। তাদের মধ্যে রানী ছিল এবং রাজা রানীকে উপঢৌকন দিত। যেমনটা অন্যকে দিত, রানীকে দিত তদ্রূপ।অন্যান্য স্ত্রীকেও, এমনকি নিম্ন বর্ণজাত স্ত্রীরাও পেত সে সম্মান। এই একইভাবে পথপ্রদর্শিকা প্রধানদের মধ্যের নারীরাও পেতো রাজার কুর্নিশ।
কৌটিল্যের কালে দেখা গেছে নারীদের প্রায় সকলের বয়স ১২ এবং পুরুষদের প্রায় সকলের বয়স যখন ১৬ হয়ে যাচ্ছে তখন সেটাই তাদের বিয়ের বয়স হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। মেয়েদের উত্তর ঋতুকালে হচ্ছে বিয়ে। বৌধায়নের গৃহসুত্র মেয়েদের উত্তর ঋতুকালের বিয়ের ব্যাপারটা নিশ্চিত করে দিয়েছে। মৃত্যুর পরে যেমন অনুষ্ঠান হয়, মেয়েদের ঋতু কালের পরেও হয় অনুষ্ঠান। সেটা ঘোষণা করতো বিয়ের বয়স।
কোন বয়সে মেয়েদের বিয়ে হবে তা উল্লেখ করা নেই কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে। বিয়ের আগে পাত্র পাত্রীর কোনও যৌন অভিজ্ঞতা আছে কিনা তাও জানার উল্লেখ নেই। অথবা বলা যায় সে কথা আলোচনায় আসে না। কারো সাথে যৌন সম্পর্ক আছে কি নেই সেই বিষয়ে কৌটিল্য বলেনঃ (কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রঃ শ্যামসুস্ত্রী, পৃষ্ঠা ২২২)
“কোন ব্যক্তি তার কন্যার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে কিনা তা না জানিয়ে যদি বিয়ে দেয় তবে তাকে শুধু জরিমানা ধার্য করা হবে না তাকে শাস্তি দিতে হবে এবং সে শাস্তি হলো শুল্ক এবং স্ত্রীধন যা পাবে- ফেরত দিতে হবে তা। অন্যদিকে আবার পুরুষ যদি অন্য কোন মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে বা নেই তা না জানিয়ে বিয়ে করে তাহলে পাত্রের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্যে উপরে কথিত জরিমানার দ্বিগুন জরিমানা দিতে হবে এবং সে শুল্ক বা স্ত্রীধন যা কন্যাকে দেবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে (শ্যাম শাস্ত্রী, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র পৃষ্ঠা ২৫৯) বলা হয়েছেঃ ‘পাত্র-পাত্রী যদি একই বর্ণের হয় তাহলে কোনও অপরাধ বলে গণ্য হবে না, এবং পাত্রী যদি ঋতুমতি হওয়ার তিন বছরের মধ্যে বিয়ে না করে থাকে, সে ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। আবার পুরুষের ক্ষেত্রে এটা কোনও অপরাধ হবেনা এবং ভিন্ন বর্ণের হলেও হবে না যদি দেখা যায় পাত্রী ঋতুমতি হওয়ার তিন বছরের মধ্যে বিয়ে করেনি এবং কারো কাছ থেকে সে গহনাও গ্রহণ করেনি।‘
মনুর মতো কৌটিল্য নন। মনু বহুগামিতার পরামর্শ দিয়েছেন। মনু যা বলেছেন কৌটিল্য তার বিপরীত মেরুতে থেকেছেন। পুরুষ কেবল বিশেষ কয়েকটা ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারে। তার মতে সেগুলি হলঃ
‘কোন ব্যক্তির স্ত্রী কেবল মৃত সন্তান প্রসব করে অথবা তার কোন পুত্র সন্তান নেই অথবা স্ত্রী বন্ধ্যা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারে এবং আট বছর দেখার পরে দ্বিতীয়বার বিয়ে করবে। যে ক্ষেত্রে স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করবে, সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে ১০ বছর। যে ক্ষেত্রে স্ত্রী কেবল কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় সে ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হবে ১২বছর। সেই অপেক্ষার পরে পুরুষ যদি একটি পুত্রসন্তানের জন্য ব্যাকুল হয় তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করতে পারে। এই প্রকারের প্রদেয় বিধি লঙ্ঘন একান্ত নিষিদ্ধ। বিধি ভাঙলে স্ত্রীকে শুধু শুল্ক বা স্ত্রীধন দিলে চলবে না তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে অর্থ যার নাম অধিবেদনিকার্থম। এবং সরকারের অর্থকোষে ২৪পানা অর্থদণ্ড দিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমাপের শুল্ক ও স্ত্রীধন সে ক্ষেত্রেও দিতে হবে যে ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রথম বিবাহের সময়ে তা গ্রহণ করেনি। তার ভরণপোষণের ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। এসব করে যত খুসি বিয়ে করতে পারে পুরুষ। এর পেছনে ভাবনা টা হল এই যে পুত্র সন্তান লাভের জন্যই তো নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে’।
মনুর সময় এটা ছিল না, এটা ছিল কৌটিল্যের সময়ে। শত্রুতা তৈরি হলে বা পরস্পরের মধ্যে ঘৃণার প্রকাশ পেলে নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারত।
“স্বামীকে কোনও না কোনও ভাবে ঘৃণা করে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারত না। আবার সেই একই প্রকারে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারত না কোন স্বামী। কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক ঘৃণার উদ্ভব ঘটলে ঘটতো বিবাহ বিচ্ছেদ। কোন পুরুষ স্ত্রীর থেকে বিপদ আশঙ্কা করে তার থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলে বিয়ের সময় পুরুষ স্ত্রীকে যা কিছু দিয়েছিল বা স্ত্রী পুরুষকে যা কিছু দিয়েছিল তা ফিরিয়ে দিয়ে বিচ্ছেদ হত। অনুরূপভাবে স্বামীর থেকে কোন বিপদ আশঙ্কা করে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলে স্ত্রীকে তার স্বামীর সমস্ত সম্পত্তির অধিকার ত্যাগ করতে হতো। স্বামী যদি দুশ্চরিত্র হয় স্ত্রী তাকে ত্যাগ করতে পারত।
স্ত্রী তার ভরণপোষণ দাবি করতে পারত অনির্দিষ্টকালের জন্য। তার প্রয়োজনের জন্য আহার ও বস্ত্র দিতে হতো তাকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিতে হতো তাকে, যদি স্বামীর আয়ের সংস্থান বেশি থাকত। আর সময়টা যদি বাধাধরা সময়ের হত, নির্দিষ্ট অর্থের সাথে আরও এক-দশ পত্তন অতিরিক্ত অর্থ দিতে হত। পরিত্যাক্ত স্ত্রীর সম্পূর্ণ গ্রাসাচ্ছাদন করতে হতো। আর পরিত্যক্ত স্ত্রীকে শুল্ক, সম্প্ত্তি ক্ষতিপূরণ (যেটা স্বামীকে তার পুনর্বিবাহের অনুমতি পেতে দিতে হতো) দেওয়া ছিল আবশ্যিক।
আর স্ত্রী যদি শ্বশুরবাড়ির পরিবারের কোনও কারো রক্ষনাধীন হয়ে থেকে যেত অথবা সে যদি একাকী স্বাধীন ভাবে বসবাস করত তাহলে স্বামীকে ভরণপোষণের নিমিত্ত দায়ী করা হত না। এভাবে নারীর স্বপক্ষে দৃঢ় এক ব্যবস্থা ছিল বেঁচে থাকার।
কৌটিল্যের সময়কার সমাজ ব্যবস্থায় কোনও নারীর অথবা কোনও বিধবার পুনর্বিবাহে নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
“কোনও মহিলা হঠাৎ করে বিধবা হয়ে গেলে বা স্বামীহারা হলে তখন যদি তার ধর্মীয় জীবন যাপনের বাসনা হত, সে তার বাসনা পূর্ণ করতে পরিবার থেকে প্রদেয় পাওনা সব পেয়ে যেত। তার অলংকারসমূহ তার থাকত এবং প্রদেয় শুল্কের বাদবাকিটাও পেত। এই পাওনা পেয়ে গিয়ে সে পুনর্বিবাহ করলে সবকিছুই ফেরত দিতে হত তাকে। আর ফেরত দিতে হত সুদসহ। এই ধর্মীয় জীবনযাপনের কথা মাথায় না এলে যদি সে দ্বিতীয়বার সংসার পাতার কথা ভাবত, তাহলে তার শ্বশুর তাকে যা দিয়েছিল অথবা তার স্বামী তাকে যা দিয়েছিল অথবা তার শ্বশুর এবং স্বামী মিলে তাকে যা দিয়েছিল তা তারই থাকত। স্বামীর সাথে দীর্ঘদিন থাকার কথা দ্বিতীয় বিয়ের সময় স্ত্রী খুলে বলতে পারত”।
“বিধবা হয়ে যাওয়ার পরে মহিলারা শশুরের পছন্দমত কাউকে বিয়ে না করলে শ্বশুরের দেওয়া সব কিছু ফেরত দিতে হোত। স্বামীর দেওয়া সব কিছুও ফেরত দিতে হোত”
“জ্ঞাতিকুটুমের কাউকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে বিবাহিতার আগের শ্বশুর জ্ঞাতিকুটুমের থেকে পাওয়া সব সম্পত্তি পেয়ে যাবে। কোনও ব্যক্তি মহিলার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকলে তাকে তার বিষয়ে-আসয় রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে। মহিলারা দ্বিতীয়বার বিবাহ করলে তার আর পূর্বতন স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার থাকবে না।
যদি কেউ ধর্মপ্রানা হয়ে জীবন যাপন করতে চায় তা করতে পারে। কোনও নারীর এক বা একাধিক পুত্র সন্তান থাকলে দ্বিতীয় বিবাহের পরে সে তার সম্পত্তি নিজের খুশিমতো ব্যবহার করতে পারে না। কারণ সে সম্পত্তিতো ছেলে বা ছেলেরা পাবে।
“দ্বিতীয় বিয়ের পরে কোনও মহিলা যদি তার সম্পত্তি আগের স্বামীর থেকে পাওয়া সন্তানদের জন্য অধিকারে নিতে চায়, সে ক্ষেত্রে পাওয়া সম্পত্তি আগের স্বামীর থেকে পাওয়া সন্তানদের নামে করে দিতে হবে। কোনও মহিলার যদি একাধিক স্বামীর থেকে একাধিক পুত্র সন্তান থাকে সে তখন যে স্বামীর যে সম্পদ তা তারই জন্য রাখবে, কোনও সম্পত্তি তাকে পুরোপুরি ভোগ করার অধিকার দেওয়া হলেও সে তার সন্তানদের নামে তা দিতে বাধ্য”।
“যে নিঃসন্তান বিধবা তার পরলোকগত স্বামীকেই কেবল আঁকড়ে আছে আর তার শিক্ষক তাকে আপদে-বিপদে রক্ষা করে, সে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিনই তার সম্পত্তি ভোগ করবে। কারণ সম্পত্তিতো বিপদের দিনে প্রয়োজনের বস্তু। তার মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তি তার জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা পাবে। ব্যাপারটা যদি এমন হয় স্বামী বেঁচে আছে কিন্তু স্ত্রী গত হয়েছে সে ক্ষেত্রে তার ছেলেমেয়েরা সম্পত্তি ভাগ করে ভোগ দখল করবে। আর যদি পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে কন্যারা পাবে। ছেলেমেয়ে না থাকলে স্বামী স্ত্রীকে যা দিয়েছিল স্বামীই তা ভোগ করবে, আর স্বামী স্ত্রীকে পন হিসাবে যা দিয়েছিল সেসব তার আত্মীয়রা পাবে। সেকালে এইভাবে স্ত্রী ধন ব্যবহৃত হত”
“শূদ্র, বৈশ্য, ক্ষত্রিয় অথবা ব্রাহ্মণ জাতির স্ত্রীরা এবং যে স্ত্রীরা কোন সন্তানের জন্ম দেয়নি, তারা স্বামী যদি বিদেশে গিয়ে থাকে তাহলে স্বামীর জন্য এক বছর, দুই বছ্ তিন বছর এবং চার বছর অব্দি অপেক্ষা করবে; আর সন্তান জন্মানোর পরে যদি বিদেশে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এক বছরের বেশি অপেক্ষা করতে হবে। আর টাকা পয়সা যদি পাঠায় সেক্ষেত্রে এই সময়ের দ্বিগুণ সময় অব্দি অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি টাকা পয়সা না পাঠায় স্বামীর অর্থ বা আত্মীয় বা জ্ঞাতি তার চার বছর অথবা ৮ বছর টাকা পয়সা দেবে। এরপরে তাদের বিয়ের অনুমতি দিতে পারে যে টাকা পয়সা সে ব্যয় করেছে তা ফেরত পেয়ে গিয়ে। যদি স্বামী ব্রাহ্মণ হয় আর বিদেশে পড়াশোনা করছে, স্ত্রীর কোনও সন্তানাদি হয়নি তাহলে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর যদি সন্তান থাকে তাহলে ১২বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর স্বামী যদি কোন রাজার চাকর হয় তাহলে স্ত্রীকে অমৃত্যু অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু স্বামী যদি উঁচু বর্ণের হয় (দ্বিতীয় স্বামী ও প্রথম স্বামী একই গোত্রের) তাহলে বর্ণ ব্যবস্থা টিকে থাকছে এই সুবাদে স্ত্রীকে কোনও ভাবে অপরাধে দণ্ডিত করা যাবে না। যদি স্ত্রী তার স্বামী নেই যখন বা স্বামী ত্যাগ করে চলে গেছে তাকে, সে বিয়ে করতে চায় সে পছন্দের মানুষ বিয়ে করতে পারে। এমনটা ধরে নিয়ে যে তাকে দুঃখ থেকে রক্ষা করবে ভরণপোষণ চালাবে তার।”
মনুর মত এ ব্যবস্থা নয় এ ব্যবস্থা মনুর ব্যবস্থার বাইরে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বিবাহিত মহিলাদের। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে সে ব্যবস্থায় খুবই পরিষ্কার বলা হয়েছেঃ “ভরণপোষণের উপায় (ভ্রুতি) অথবা সোনাদানা হল মেয়েদের নিজস্ব সম্পদ। ব্যক্তিসম্পদ। ২০০০ টাকার বেশি তাকে তার আত্মনির্ভরতার জন্য করে দিতে হবে তার নামে। স্বর্ণালংকারের বিষয়ে কোন পরিমাপ বেধে দেওয়া নেই। মেয়েরা তার সন্তানের জন্য এগুলো ব্যবহার করলে তার কোন দোষ হবে না। পুত্রবধূর জন্য ব্যবহার করলেও কোন দোষ হবে না। নিজের জন্য ব্যবহার করলেও কোন দোষ হবে না। স্বামী আছে অথচ এসব করছে না তখনই স্ত্রীকে করতে হয় এসব। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে, অসুখ-বিসুখে অথবা বিপদে, বিপদ মুক্তির জন্য এবং দান ধ্যানের জন্যও কাজ করতে হয়। স্বামী সম্পদের যথার্থ ব্যবহারের নিমিত্ত সে করে তা। স্বামী স্ত্রীর পরস্পর বোঝাপড়ায় তারা কোনও যমজ সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকলেও সম্পদ ভোগের ব্যাপারে তাদের মধ্যে যেমন থাকবে না কোনও অভিযোগ তেমনি তাদের মধ্যে সম্পদ নিয়ে তৈরি হবে না কোনও সংকট।
“অনির্দিষ্টকালের জন্যে নারীর ভরণপোষণ পাওয়ার দাবি পেশের অধিকার আছে। তাকে খাদ্যবস্ত্র, গ্রাসাচ্ছাদন যতটা প্রয়োজন ততটাই দিতে হবে। অথবা স্বামীর আয়ের পরিমাণ বেশি হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিতে হবে। প্রাপ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ এক-দশাংশ বেশি, যদি সময়টা কম কালের হয়। আবার আয়ের পরিমাণ বেশি হলে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থও ধার্য করে দেওয়া হতে পারে। তাকে যদি শুল্ক, সম্পদ এবং ক্ষতিপূরণ (যেটা স্বামীর দ্বিতীয়বার বিয়ের পর দিতে হয়) না দেওয়া হয়ে থাকে সেটা দেবার নির্দেশ আছে। শ্বশুরবাড়ির তরফে কারও পক্ষ থেকে যদি তাকে সুরক্ষা প্রদান করা হয় অথবা যে নিজে যদি স্বাধীন ভাবে বসবাস করতে থাকে, তখন তার স্বামীর কাছ থেকে যে অর্থ পাওয়ার কথা তা পায় না। এভাবেই স্ত্রীর স্বাধীন মত বেঁচে থাকার পোক্ত ব্যবস্থা আছে”
আমরা বিস্মিত হই এখনও এ কথা ভেবে। কৌটিল্যের সময় মেয়েরা আইনগতভাবে বিচারের জন্য আদালতে যেতে পারত, ব্যবস্থা নিতে পারত স্বামীর বিরুদ্ধে তাকে নির্যাতন করার কিংবা অপবাদ দেবার জন্যে।
সংক্ষেপে এই হল আমাদের দেশে মনুর আবির্ভাবের আগেকার দিনে মেয়েদের কথা। মেয়েরা কতটা স্বাধীন ছিল এবং কতটা ক্ষমতালাভের অধিকারী ছিল সেই ইতিবৃত্ত।
তাহলে খুব জরুরী প্রশ্ন আমাদের সামনে, মনু মেয়েদের এতটা অপমানিত ও অধঃপতিত করতে গেল কেন?
‘চতুর্থ দুনিয়া’ আগষ্ট ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত।