“ক্রান্তীজ্যোতি সাবিত্রী বাই ফুলে “
নাটক রচনা – রাজু দাস (১০ – ১২ -২৪)
প্রথম অভিনয় রজনী । সুন্দরবনের দক্ষিণ বারাসাতে, ৩ রা জানুয়ারি ২০২৪
অভিনয়ে
সাবিত্রী বাই/ নমিতা দাস । জ্যোতিরাও ফুলে/ রাজু দাস।
হরিরাম / সুবল দাস । ভোলা / বাবুলাল দে । টগর বাংলা / জবা দে । ধোন্দী / সন্তোষ সরকার । রোদি / অনিতা সরকার ।
রচনা ও নির্দেশনায় + রাজু দাস।আবহ সঙ্গীত – শংকর নাইয়া ।
( বারান্দা অথবা উঠোনে একটি খাটিয়া, না হলে একটি বেঞ্চ থাকবে । দৃশ্য পরিবর্তনের সময় চাদরটা পাল্টালেই হবে সময় সকাল )
প্রথম দৃশ্য : –
হরিরাম ভট্ট : ওঁ: জবা কুসুম ( মন্ত্র পাঠের পরে সূর্যকে প্রনাম করে)
( রোদি ও ধোন্দীর প্রবেশ )
রোদি : পেন্নাম হই পন্ডিত মশাই –
হরিরাম : ( দুইপা পিছিয়ে ) এই – এই আর একপাও এগুবি না , ছোটলোকের বাচ্চারা । সরে দাঁড়া , আরো সরে দাঁড়া । তোদের ছোঁয়া লাগলে আমাকে আবার সিনান করতে হবে ।
ধোন্দী : ঠিক আছে, আমরা দুরেই দাঁড়াচ্ছি –
হরিরাম : বল এই প্রাতঃকালে তোরা দুজনে কি মনে করে এলি ?
রোদি : মালিক, আমাদের বড় মেয়েটার বয়স নয় বছর পেরিয়ে গেছে । তাই ওর জন্য একটি ভালো পাত্রের সন্ধান পেয়েছি –
হরিরাম : তা বেশতো , তোরা পঁচা ঠাকুরের কাছে যা।জানিস তো আমি হলাম ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ কুলীন ব্রাহ্মণ । তোদের অচ্ছুৎদের বাড়িতে পুজো পাঠ আমি করিনা
ধোন্দী : না আমরা সে জন্য আসিনি –
হরিরাম : ( ভেংচি ) তা কি জন্য এসেছিস বলে ফ্যাল
ধোন্দী : আপনি তো জানেন আমরা দিন আনি দিন খাই।কারও সাতে পাঁচে নাই ।
রোদি : দুমুঠো ভাতের বদলে আমরা দুজনে আপনার ঘাটে – মাঠে বেগার খাঁটি বলেন মালিক ?
হরিরাম : হ্যা তা খেটেছিস ।এবার আসলটা বল । আমি এবার গীতা পাঠের আসনে বসব –
ধোন্দী : মেয়ের বিয়ের জন্য আমাদের একশো টাকা ধার দিন পন্ডিতজী
রোদি : আমরা আপনাকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দেবো ।
হরিরাম : সুদ দিতে হবে না, তুই একরাতের জন্য তোর মেয়েটাকে নৈবেদ্য হিসেবে আমার মন্দিরে পাঠাস, আমি দত্তা ভগবানের চরণে প্রসাদ করে দেব ।
ধোন্দী : না ! না ঠাকুর মশাই, মেয়েকে আমি গলাটিপে মেরে ফেলে দেব – তবুও মন্দিরে পাঠাবো না । চল রোদি –
হরিরাম : ঠিক আছে – ঠিক আছে, মেয়েকে মন্দিরে পাঠাতে হবে না । তোদেরকে আমি একহাজার টাকা দেবো, তার বিনিময়ে ছোট্ট একটা কাজ করে দিতে হবে । আমি তোদের পাঁচশো টাকা এমনিতেই দিয়ে দেব –
ধোন্দী : কি কাজ করতে হবে, আগে বলেন
রোদি : আপনি যে কাজ বলবেন আমরা তাই করবো।
হরিরাম : জ্যোতিরাও ফুলেকে হত্যা করতে হবে ।
রোদি – ধোন্দী : কি বলছেন আপনি! জ্যোতিরাও ফুলের মতো দলিত দরদী মানুষকে খুন ?
হরিরাম : হ্যা, খুন করবি । কারণ জ্যোতিরাও – সাবিত্রী বাই ফুলে তোদের মং মাহার ছোট জাতের মানুষের কাছে মহান হলেও, আমাদের ব্রাহ্মণদের কাছে নয় । ঠিক আছে তোদের দুজনকে একহাজার টাকা দেবো । মাত্র কাটারির এককোপে ধর থেকে মাথাটা নামিয়ে দিবি।তাহলেই তোদের দু:খু দারিদ্র ঘুচে যাবে ।
ধোন্দী : না এই খুন আমি করতে পারবোনা
রোদি : এছাড়া মেয়েদের বিয়ে দেবার সামর্থ আমাদের নেইরে ধোন্দী ! ইতিপূর্বে অনেকের কাছে ধার চেয়েও পাইনি
হরিরাম : ভেবে দ্যাখ , মাত্র এক কোপে একহাজার টাকা । যা তোরা সারাজীবনে রোজগার করতে পারবিনা ।
ধোন্দী : না পারি , একবেলা খেটে খাবো । তবুও খুন খারাবি করবোনা।
হরিরাম : কিরে রোদি , তুইও করবি না ?
রোদি : ধোন্দী সাথ না দিলে, আমিও খুন করবো না
হরিরাম : খুন না করলেও তোদের যে জেলে যেতে হবে
ধোন্দী : কেন জেলে যাবো ! আমরা তো চুরি করি নাই
হরিরাম : চুরি না করলেও ,তোরা চুরি করতে আমার বাড়িতে ঢুকেছিলি । আমি তোদের দুজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছি । এই কথা জানিয়ে থানায় রিপোর্ট করলেই পুলিশ এসে তোদেরকে ধরে নিয়ে হাজতে পুরবে।
রোদি : তাহলে কি হবেরে ধোন্দী মেয়েদের ?
হরিরাম : রোদি- ধোন্দী এক্ষুনি সিদ্ধান্ত নে একহাজার টাকা নাকি জেলের চাক্কী পিষবি ?
একহাজার টাকা না জেল । এক হাজার টাকা না জেল । কোনটি চাই বল ?
রোদি – ধোন্দী : একহাজার টাকা চাই – বাঁচতে চাই। মেয়েদের বাঁচাতে চাই –
( দুজনে দুপাশে হাটুভেঙে বসে দুহাত বাড়িয়ে দেয়।হরিরাম টাকা দেবার পোজের সঙ্গে বিকট হেসে ওঠে )
+ দ্বিতীয় দৃশ্য +
( একটা খাটিয়া অথবা বেঞ্চ পাতা থাকবে।সময় বিকেল )
জ্যোতিরাও : ( নিজের লেখা কবিতা পাঠ করতে করতে প্রবেশ )
শিক্ষার অভাবে বুদ্ধি হ্রাস প্রাপ্ত হয়
বুদ্ধির অভাবে নৈতিকতা ক্ষয় হয় –
নীতির অভাবে উন্নতি থেমে যায়
উন্নতির অভাবে ধন বিলুপ্ত হয়
অর্থের অভাবে শূদ্র ধংস হয়-
সাবিত্রী বাই: এই যে তাতিয়াজী , রান্না ঘরে বসে আমিও একটি কবিতা লিখেছি । একটু শুনে বলোতো কেমন হয়েছে ।
জ্যোতিরাও : আগে পড়ে শোনাও –
সাবিত্রী বাই : কবিতার নাম – যাও, আগে শিক্ষানাও ।
স্বনির্ভর হও , পরিশ্রমী হও ,
কাজ কর , শিক্ষা নাও , বিত্ত্বশালী হও ।
বিদ্যা ছাড়া সব নষ্ট-
ঞ্জানহীন মোরা পশু ।
কর্মহীন আর নয় , যাও শিক্ষা নাও,
শেষ কর দু:খকষ্ট বঞ্চিত জনের ।
আছে শিক্ষার সুবর্ন সুযোগ ,
ভাঙ্গো জাতির শৃঙ্খল-
ফেলে দাও ব্রাহ্মণের শাস্ত্র ।।
জ্যোতিরাও : ( হাততালি ) বাহ: বাহ: দারুন হয়েছে । আমি এতো লেখা – লেখি করেও যা বলতে পারিনি, তুমি তোমার এই ছোট্ট কবিতার মধ্যে তাই বলতে পেরেছো । জানো সাবিত্রী, মং ও মাহার মেয়েদের জন্য দুটি বিদ্যালয়, আর একটি লাইব্রেরী করার প্রকল্প পাঁকা করে ফেলেছি –
সাবিত্রী : খুব ভালো করেছো । তোমার আগে আর কেউ এমন করে মেয়েদের কথা ভাবেননি ।
জ্যোতিরাও : ও তোমাকে বলতে ভুলে গেছি, আমি গোলামগিরি নামে একটি বই লিখবো মনস্থ করেছি । যাতে থাকবে ষোলটি অধ্যায় । প্রথম দশ অধ্যায়ে হিন্দুদের দশ অবতারকে যুক্তি দিয়ে খন্ডাব । আর বাকি ছয় অধ্যায়ে থাকবে ব্রাহ্মণদের নীচতা আর কুসংস্কার, এবং তা নির্মূল করে যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠার ব্যাখ্যা ।
সাবিত্রী : সত্যি দারুন ভাবনা তোমার।কিন্তু আমার সমাজের বেশিরভাগ দলিত মানুষেরা যে নিরক্ষর । তারা পড়বে কি করে ?
জ্যোতিরাও : তাঁদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব তুমি, আমি,
ফাতিমা শেখ এবং সুগনাবাই তো কাঁধে তুলে নিয়েছি । তার আগে ব্রাহ্মণরা বুঝুক শাস্ত্রের নামে ভন্ডামি, ফাঁকিবাজি আমরা ধরে ফেলেছি ।
সাবিত্রী : ওহ্ তোমাকে একটা কথা বলতে আমিও ভুলে গেছিলাম, তা হলো তোমার লেখা “তৃতীয় রত্ন “নাটকের অভিনয় দেখার পর ব্রাহ্মণ পুরোহিত আর সমাজপতিরা তো রেগে একেবারে আগুন হয়ে আছে । অবশ্য এই নাটকটি দেখে আমাদের দলিত ভাই বোনেরা তোমার জয় জয়কার করছে ।
জ্যোতিরাও : তবু তবুও আমি খুশি হতে পারছিনা সাবিত্রী ।
সাবিত্রী : কেন গো, কেন এমন কথা বলছো ?
জ্যোতিরাও : আমি যখনি তোমার মুখের দিকে তাকাই, তোমার চোখে চোখ রাখি , তখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় ।
সাবিত্রী : এতোদিন পরে এমন কথা বলছো কেন গো ?
জ্যোতিরাও : কত বছর পেরিয়ে গেছে আমাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে ।
সাবিত্রী : তখন আমি নয় বছরের শিশু,আর তখন তুমি চৌদ্দ বছরের কিশোর । আমার খেলার সাথি
জ্যোতিরাও : সেই শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে আজ আমি বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে বেশ বুঝতে পারছি পিছিয়ে রাখা সমাজের উন্নয়নের চিন্তায় তোমাকে একটা সন্তান দিতে পারিনি ।
সাবিত্রী : এতে তোমার তো কোন দোষ নেই । আমিই হয়তো সন্তান ধারণে অপারক । এক কাজ করো, তুমি আবার বিয়ে করো । তাহলে —
জ্যোতিরাও : ছিঃ ছিঃ সাবিত্রী ছিঃ ( সাবিত্রীর মুখে হাত চাপা দিয়ে ) তুমি জানো না ! এমন কথায় আমি কষ্ট পাই । তাছাড়া আমাদের পাঠশালা, অনাথ আশ্রমের শিশুরা তো আমাদেরই সন্তান । ওরা যখন তোমার পোষ্যপূত্র যশোবন্তের মতো তোমাকে আম্মা আম্মা বোলে ডাকে, তখন তোমার বুক ভরে যায় না ?
সাবিত্রী : যায় গো যায় । যখন দেখি কোন একটি শিশু একছুটে দৌড়ে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরে । আবার অন্য একটি শিশু আমার আঁচল ধরে সারাটা উঠোন ঘুরে বেড়ায়, তখন আমি ওদেরকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে সমস্ত দু:খ কষ্ট ভুলে যাই ।
জ্যোতিরাও : ঠিক বলেছো সাবিত্রী । অনাথ আশ্রমের শিশুরাই তো আমাদের সন্তান । আমাদের আর দু:খ কিসেরবলো ?
সাবিত্রী : ঠিক বলেছো,আমাদেরআর কোন দু:খ নেই । তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি এক গ্লাস লচ্ছি নিয়ে আসছি ( প্রস্থান )
( জ্যোতিরাও ফুলে, হাতে করে নিয়ে আসা খাতায় কিছু লিখতে থাকবেন, তখন সাবিত্রী বাই একগ্লাস লস্যি নিয়ে ঢুকবে )
সাবিত্রী : লস্যিটা খেয়ে নাও তো ( খাতা কলম গুটিয়ে বলে ) এই যে তাতিয়াজী তোমাকে পই পই করে বারণ করি , এতো পরিশ্রম কোর না । রাতে অন্তত ঘন্টা ছয়েক ঘুমোও । তা আমার কথা না শুনে উনি লন্ঠন জ্বালিয়ে নাটক কবিতা প্রবন্ধ লিখবেন । আরে মশাই , চোখটা নষ্ট হলে সমাজ সেবা করবে কি করে ?
জ্যোতিরাও : আমি না হয় লেখাপড়া করি । আর তুমি ? তুমি যে সেই একই আলোতেবসে, খরিদ্দারের জন্য কাঁথা লেপ তোষক সেলাই করো । এতে তোমার চোখের এবং শরীরের পরিশ্রম হয়না বুঝি। ?
সাবিত্রী : এইটুকু পরিশ্রম না করলে আমাদের সংসার, অনাথ আশ্রম, ছাত্র ছাত্রীদের বই খাতার জোগান চলবে কি করে ! নাও এখন এই বারান্দায় একটু চোখ বুজে ঘুমিয়ে নাও । আমি তোমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি । ( এই সময়ে রজনীকান্ত সেনের “কবে তৃষিত এ মরু – – “গানটি গাইবে অথবা নেপথ্যে কিছুটা বাজবে । জ্যোতিরাও ঘুমোবে । টগর বাংলা নামের একটি নারী চরিত্র প্রবেশ করবে । ইচ্ছে করলে এই নারী চরিত্রের অভিনেত্রী না জোগাড় করতে না পারলে বাদ দিয়েও নাটকটি পরিচালনা করতে পারবেন )
টগর বালা : সাবিত্রী দিদি, তুমি আমাকে বাঁচাও দিদি -( দুপা জড়িয়ে ধরে )
সাবিত্রী বাই : আরে আরে!কে তুই , কোথা থেকে এলি ?
টগর বালা : আমি টগর বালা । ঐ কৈবর্ত পাড়ায় আমার শউর বাড়ি।চতুর্দিকে রইটে গেছে,তুমি মেলা পাঠশালা,অনাথ আশ্রম বানাইছো । হক্কলের বেপদে- আপদে পাশে থাকছো ?
সাবিত্রী বাই : ঠিকই শুনেছিস । তারপর বল ?
টগর বালা : মাত্তর ছ’মাস হতি চইললো মোর সোয়ামীডা ওলা ওঠায় মইরে গ্যাছে । এরমধ্যে দেওর, ভাসুর,শাউরী আমাগের বাড়ি ছাড়ার জন্যি অত্যাচার করতি লেগেছে । তার ওপর ছুচায় নাতায় চড় থাপ্পর তো আছেই –
সাবিত্রী বাই : তোর সমস্যাটা ভালো করে শুনি । তারপর দেখবো বিহিত করতে পারি কিনা । আচ্ছা তোদের চাষের উপযোগী জমি – জমা নেই ?
টগর বালা : মেলা আছে । তা ধরো গিয়ে চার পাঁচ একর তো হবেই । জানো সাবিত্রী দিদি,সোয়ামীডা বেইচে থাইকতে বেশ সুখেই ছেলাম।উনি আমারে খুব আদর সোহাগ কইরতো । আমাগের মেইয়া তিনডারে খুব ভালো বাইসতো । কিন্তু ঐ শালার বিধাতার তা সহ্যি হলো না !
সাবিত্রী বাই : বিধাতার কি করে সহ্য হবে টগর,সেও যে নিষ্ঠুর পুরুষ ।
টগর বালা : জানো দিদি,আমার শাউড়ী মাগী কতায় কতায় আমারে ভাতারখাগি রাক্ষুসী বলে খোঁটা দিয়ে বলে – পরপর তিনখান মাইয়া বিয়াইয়া নিজের সোয়ামীডারে মেইরে এই সংসারের অন্ন ধ্বংস করতিছিস । তোর মরণ হয়নে কেনো ?
সাবিত্রী বাই : দু:খ করিস না টগর,ভারতের সব বিধবাদের কপালেই তোর মতো অপমান অত্যাচার অবহেলা জোটে । সেই জন্যই আমি অসহায় বিধবাদের সেবাশ্রম তৈরি করেছি ।
টগর বালা : তোমার তো আমার মতো তিন তিনটে মেয়ে নেই,তাই এতো সব কাম কাজ করতি পারছো ।
সাবিত্রী বাই : তুই তোর মেয়েদেরকে নিয়ে তোর বাপের বাড়িতে চলে যা-
টগর বালা : ( দীর্ঘ নিঃশ্বাস ) সে পথও যে বন্ধ দিদি
সাবিত্রী বাই : কেন ! সে পথ বন্ধ কেন ?
টগর বালা : মোর বাপ মা স্বগ্যে গ্যাছে সেই কুট্টিকালে । একটা দাদা আছে সে হেপো রুগী । তারা দিন আনে দিন খায় । হ্যার উপর একগন্ডা ছেইলে মেইয়ে । হের উপর বৃষ্টি বাদলে ঘরে জল পড়ে । তুমি দিদি আমার ভাশুর দেওড়রে বইলে কইয়ে আমার ভাগের জমি বাড়ি আদায় কইরে দাও দিদি
সাবিত্রী বাই : ( মৃদু হেসে ) আমি বললে ওরা দেবে কেন ! আমি তো মোড়ল মাতুব্বর নই –
টগর বালা : ক্যান দেবে না ! শউরের জমিতে আমার সোয়ামীরও একভাগ অংশ ছেল নাকি ?
সাবিত্রী বাই : হ্যা তা অবশ্যই ছিল । এখনো আছে –
টগর বালা : তাই হলি তিনভাগের একভাগ সম্পত্তি ন্যয্যতো আমারই । বলো দিদি ?
সাবিত্রী বাই : হ্যা ,আইন মোতাবেক তোরই। তোর অবর্তমানে তোর মেয়েদের । দেখছিস তো আমি নারীদের জন্যে ন্যয্য দাবির লড়াইটাই লড়ছি ।
সাবিত্রী বাই : তাই হলি,আমি আমার হকের জমি- জমাছাইড়বো ক্যান বলো। ?
সাবিত্রী বাই : না ছাড়বি না । তুই গাঁয়ের মোড়ল নয়তো জমিদারের কাছে নালিশ জানিয়ে দ্যাখ । তাতে ফল না হলে , তোকে কোর্ট কাচারীতে নিয়ে যাবো আমি ।
টগর বালা : লাথি মারি , লাথি মারি ( একপাশে দুবার মেঝেতে লাথি মারে ) পৈতাল বামুন জমিদার,মোড়লদের মতায় । ওরা আমাগের মতোন মৈইয়া মাইনষের দু:খু বোঝেনা দিদি । এতোদিন ঠোক্কর খাতি খাতি আমি বেশ বুইঝে গেছি , এই পিথ্যিমিতে মেইয়া মাইনষের জেবন পুরুষের হাতে,মরণও তার হাতে । তাই না দিদি ?
সাবিত্রী বাই : হয়তো তাই । সেই কারণেই আমার তাতিয়াজি জ্যোতিরাও ফুলে বলেন – যতদিন না মেয়েরা লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে,ততোদিন মেয়েদের দু:খ ঘুচবে না ।
টগর বালা : তাইলে তুমি আমার মেইয়ে তিনডের দায়িত্ব নাও দিদি । ওদের নেকাপড়া শিখিয়ে মানুষ কইরবে ।
সাবিত্রী বাই : ঠিক আছে তোর মেয়েদের থাকা খাওয়া পড়াশোনার দায়িত্ব আমি নেবো । কিন্তু তুই শ্বশুরবাড়িতে থাকবি তো ?
টগর বালা : আমার শাউরি আর বড় জা তো কইয়ে দেছে,দাসী বাদীর মতোন খেইটে পিইটে এই সংসারের কাম কাজ তুইলতে পারিস, তাইলে দু বেলা দু’মুঠো ভাত জুইটবে । নচেৎমেইয়েদের সাথে নিজে অন্য পথ দ্যাখো ।( কাঁদে ) দিদিগো এই বয়সে আর কোতায় পথ খুইজতে যাবো বলো দিনি !
সাবিত্রী বাই : কি রে বলি তোকে –
টগর বালা : তাছাড়া শউরবাড়িতে থাইকতে আমার মেলা ভয় হয়গো দিদি,দেওরডার কুনজর পইরেছে আমার গতরের ওপর । সুযোগ পেলেই জাপটে ধরে আমারে । নজ্জায় ঘেন্নায় কাউরে কিছু কইতেও পারিনা।
সাবিত্রী বাই : তবুও তোকে নিজের সতিত্ব রক্ষা করে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে হবে,সম্পত্তি রক্ষার অধিকারের জন্য । চল দেখি,তোর শ্বাশুড়ি ও ভাসুরের সাথে একবার কথা বলে আসি ।
টগর বালা : তাই চলো দিদি – তাই চলো ( দুজনের প্রস্থান )
( রোদি ও ধোন্দী নামে ( ১৮৫৬ সালে ) দুজনে হাতে চাকু ও কাটারী নিয়ে প্রবেশ করে )
রোদি : তাতিয়াজী ঘুমোচ্ছে –
ধোন্দী : সাবিত্রী বাইবাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেছে । এই মোক্ষম সুযোগ।নে রোদি, তুই এককোপে তাতিয়াজীর গলা থেকে মুন্ডুটা আলাদা করে দে-
রোদি : তুই দেনা । তুই তো আমার সোয়ামী । আমি চারিদিকে নজর রাখছি ।
( কোন পরিচালক নারী চরিত্রের অভাবে পুরুষ চরিত্র হিসেবেও অভিনয় করাতে পারেন রোদীকে )
ধোন্দী: জানিস রোদি কাপুরুষের মতো পেছন থেকে কাউকে আঘাত করতে আমার বিবেকে লাগে –
রোদি : আরে তাতিয়াজী তো এখন ঘুমোচ্ছে।ঘুমন্ত মানুষতো মরারই সামিল –
ধোন্দী : তা হোক ।তবুও আমি ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করতে পারবো না ।
রোদি : ঠিক আছে । আমি তাতিয়াজীকে ডেকে তুলছি – তারপর –
ধোন্দী : হ্যারে রোদি , তুই কি আমাকে বেকুব ভেবেছিস ! তুই ওকে ডেকে তুলবি , আর ও ঘুম থেকে উঠেই আমাদের দুজনকে মেরে হাড়গোড় ভেঙ্গে দিক ! তাই চাইছিস ?
রোদি : তা ঠিক কথাই বলেছিস।তাতিয়াজীর গায়ে অসুরের মতো শক্তি । শুনেছি এ অঞ্চলের সেরা লাঠিয়াল ভোলা সকপালকে মেরেএকদিন তক্তা বানিয়ে দিয়েছিলেন ।
ধোন্দী : ভোলা সকপালতো একা ছিল । আর আমরা তো দুইজন আছি।
রোদি : বেশ , তুই পেছন থেকে জাপ্টে ধরে, এককোপে ঘচাং ফু: করে দিবি ।কিরে ধোন্দী তুই তো পুরুষ মানুষ।বল পারবিনা ?
ধোন্দী : আলবাৎ পারবো । এই তাতিয়াজী ওঠ –
রোদি : বিকেল বেলায় বারান্দায় নাক ডেকেআরামে ঘুমাচ্ছে ।
ধোন্দী : কেন ! ঘরের মধ্যে দরজার খিল দিয়ে শুতে পারোনি?
রোদি : আর ঘুমোতে হবে না ওঠুন ( ঠেলা দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায় )
জ্যোতিরাও : ( আড়মোড়া ভেঙ্গে ) ও রোদি – ধোন্দী । কি মনে করে ! মানে তোমাদের কি সেবা করতে পারিবলো ?
রোদি : এতোদিন অনেক সেবা করেছো আমাদের –
ধোন্দী : এবার আমরা তোমার সেবা করবো । তার আগে নাটক লিখে, মিটিং করে লোক ক্ষেপানো তোমাকে বন্ধ করতে হবে ।
রোদি : হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো তোমাকে বন্ধ করতে হবে –
ধোন্দী : কচি কচি বিধবা মহিলাদের লেখাপড়া শেখানোর নাম করে ফষ্টিনষ্টি বন্ধ করতে হবে
রোদি : শিক্ষার নামে কুশিক্ষার পাঠশালা তোমাকে বন্ধ করতে হবে ।
জ্যোতিরাও : তোমাদের কথা মতো আমি যদি এসব সেবা কর্ম বন্ধ না করি। ?
ধোন্দী : হরিরাম ভট্ট ও সমাজপতিদের আদেশে আমরা তোমাকে হত্যা করবো
জ্যোতিরাও : ( উচ্চ হাসি ) আমাকে হত্যা করে তোমাদের কি লাভ হবে বলোতো ?
রোদি : আমরা এক হাজার টাকা পাবো । সেই টাকায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকবো ।
ধোন্দী : ঐ একহাজার টাকায় আমাদের অভাব ঘুচবে । আর দিন মজুরের কাজ না পেয়ে বামুন বাড়িতে বেগার খাটতে হবে না ।
জ্যোতিরাও : না রোদি, ধোন্দী । ঐ অসৎ পথের টাকায় তোমাদের অভাবতো ঘুচবে না ভাই । অথচ তোমাদের মতো অসংখ্য দলিত বহুজনেদের দারিদ্র্য , অশিক্ষা দূর করতে আমি ও সাবিত্রী বাই দিন রাত পরিশ্রম করছি । এমনকি তোমাদের কল্যানের জন্য আমরা ফুলের ব্যবসা , পৈতৃক সম্পত্তি পরিত্যাগ করে তোমাদের মাঝে বসবাস করছি । সেই আমাদের দুজনকে হত্যা করে যদি তোমাদের অভাব অনটনের অবসান হয় , তাহলে এই তোমাদের সামনে বুক পেতে দিচ্ছি । নাও আমাকে হত্যা করো ভাই বোনেরা আমার ।কি হলো তোমাদের হাতের কাটারী – চাকু আমার বুকে বিদ্ধ করো । করো হত্যা –
রোদি : ( চাকু ফেলে পা জড়িয়ে ধরে ) ঐ হারামজাদা ঘাটেরমরা বামনাটা আমাদের ভুল বুঝিয়েছে ।
ধোন্দী : ( কাটারী ফেলে, পা জড়িয়ে ধরে ) আপনি আমাদের মাফ করে দিন তাতিয়াজী ।এবার আপনি আমাকে আদেশ করুন – এই কাটারির এককোপে ঢ্যামনা হরিরাম ভট্টের মাথাটা কেটে নিয়ে এসে আপনার পদতলে অর্পন করি –
জ্যোতিরাও : না । না ধোন্দী, হিংসা দিয়ে কখনো হিংসাকে জয় করা যায় না । প্রেম প্রীতি ভালোবাসা দিয়ে মানুষকে জয় করতে হবে । তোরা আয় আমার বুকে আয় । তোরাই যে আমার আন্দোলনের একমাত্র সেনানী
ধোন্দী : আমরা আজ থেকে আপনার আদেশমেনে চলব ।
রোদি : আপনি যা বলবেন আমরা তাই করবো । শুধু আপনি আমাদের দুজনের সাথে, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবেন তো ?
জ্যোতিরাও : নিশ্চয়ই শেখাব
ধোন্দী : আমার বিধবা বোনটাকে আপনাদের বিধবা আশ্রমে রেখে পড়াবেন তাতিয়াজী ?
জ্যোতিরাও : তোমরা ওদেরকে নিয়ে এসো । সদা সর্বদা একটা কথা মনে রাখবে – শিক্ষাই হলো দারিদ্র্য মুক্তির একমাত্র হাতিয়ার । আর মা বাবারা শিক্ষিত না হলে তাদের সন্তানরা শিক্ষিত হবে কি কোরে ।
রোদি : মনে রাখবো তাতিয়াজী, শিক্ষাই হলো জাতির মেরুদণ্ড।এই কথাটি কে বলেছে ?
ধোন্দী : জ্যোতিরাও সাবিত্রী বাই ফুলে , আবার কে
( মঞ্চের তিনজনেই ফ্রিজ হয়ে যায় )
+ তৃতীয় দৃশ্য +
মঞ্চের একদিক থেকে অন্য দিকে পদচারণা করছেন হরিরাম ভট্ট।
এমন সময় লাঠি হাতে ভোলা সকপাল প্রবেশ করে ।
ভোলা : দন্ডবত ভন্ড , থুড়ি ভট্ট পন্ডিত মশাই ( ষষ্টাঙ্গে প্রনাম )
হরিরাম : ( কিছুটা পা সরিয়ে ) আরে আরে দেখিস , ছুঁয়ে ফেলিস না যেন ? বল, ধর্মদ্রোহি সাবিত্রী আর সত্যবানের থুড়ি জ্যোতিরাও ফুলের খবর সবর কী ?
ভোলা : এককথায় খুব ভালো । আর বিশদ ভাবে বলতে গেলে বলা যায়, আপনার আদেশ মতো গত তিন মাস যাবত ওদের প্রতিষ্ঠিত -সত্যশোধক সমাজের সভ্য হয়ে নানাবিধ সেবা মূলক কর্মকান্ডের অজুহাতে ভেতরের সব খবর আপনার জন্য সংগ্ৰহ করে নিয়ে এসেছি ।
হরিরাম : কি কি খবর এনেছিস শুনি ?
ভোলা : এতোদিন জানতাম ফুলে দম্পতি ইংরেজ মিশনারীদের সহায়তায় মোট ১৮ টি স্কুল তৈরি করেছেন ।এবার স্বচক্ষে দেখে এলাম আরও কত সব কর্মকাণ্ড –
হরিরাম : আরে হাঁদারাম ! কি কি দেখে এলি তাই বলনারে ?
ভোলা : অস্পৃশ্যতা দূরীকরণের সাথে সাথেই খেতমজুর, কৃষক শ্রমিকের উন্নতি, বাল্যবিবাহ রোধ , সতীদাহ প্রথা রোধ, শিশুহত্যা প্রতিরোধ গৃহ , অনাথ আশ্রম , হ্যান ত্যান আরও কত মহৎ কাজ –
হরিরাম : শালার পো শালা –
ভোলা : একি ভট্ট মশাই!বিনাদোষে আমাকে গালাগালি করছেন কেন ?
হরিরাম : ওরে বাবা, তোকে না, আমি বলছি ঐ গোবিন্দ মালির ছেলে, বৌমাকে চক্রান্ত করে গ্ৰামছাড়া করেও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছি না । ঐ শালার বৌ শালী সাবিত্রী বাই আমাকে হুল ফুটিয়েই চলেছে ।
ভোলা : কোথায় হুল ! দেখি দেখি –
হরিরাম : দুর বুদ্ধু , এ হুল সে হুল নয় । তা হ্যারে ভোলা ! ঐ শিশুহত্যা প্রতিরোধ গৃহের ব্যাপারটা কিরে ?
ভোলা : বুঝলেন না তো ! বেশ বুঝিয়ে বলছি । আপনার মতো শতাধিককুলীন ব্রাহ্মণদের , শতাধিক বিবাহের ফলে যে সকল নারীরা অকালে বিধবা হয়েছেন , তারাতো বাপের বাড়িতেই ঝিগিরি করছে ?
হরিরাম : তাইতো করবে । আমি বা আমরা তাদের কৌলিন্য রক্ষা করতে বিয়ে করেছি বলেই তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য ন ই !
ভোলা : ঐ সকল কচিকাচা বিধবাদের প্রলোভন দেখিয়ে অথবা জোর করে ধর্ষণ করে গর্ভবতী বানাচ্ছে বর্ণহিন্দু কামুক পুরুষেরা । ঐ সকল ধর্ষিতা মায়েদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেছে।কেউ কেউ নিজের নবজাতক শিশুর মুখে নুন খাইয়ে, গলাটিপে অথবা নদীর জলে ফেলে দিচ্ছিল । এরপরে লোকনিন্দের ভয়ে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে না পারলে,কাশি – বৃন্দাবনে গিয়ে ভিক্ষা অথবা বেশ্যাবৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছিল –
হরিরাম : এসব গপ্পো সবাই জানে –
ভোলা : সবাই যেটা জানেনা, তা হলো এই সকল অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের একটি আশ্রমে রেখে সেবা শুশ্রূষা করে তাদের সন্তান প্রসব করাচ্ছেন নিজের হাতে সাবিত্রী বাই ফুলে ।
হরিরাম : প্রসব করানোর পরে সেই সব কুলটা মা ও জারজ শিশুদের দেখভাল কি সাবিত্রী বাই ফুলেই করছে ?
ভোলা : অবশ্যই । সেই সঙ্গে ঐসব মায়েরা কাঁথা সেলাই থেকে ধানভানার মতো কায়িক পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন । আচ্ছা ভট্ট মহারাজ, গঞ্জাপেটে কেশোপন্ত সিন্ধের বাড়িতে থাকাকালীন এক ব্রাহ্মণ বিধবা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল, সেই ঘটনা মনে পড়ছে তো পন্ডিতজী ?
হরিরাম : হ্যা হ্যা বেশ মনে পড়ছে ।সে তো অনেক বছর আগের কথা । শুনেছিলাম সে খানকিমাগী নদীর জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ।
ভোলা : ভুল শুনেছেন । কাশিবাইয়ের নদীর জলে আত্মহত্যার আগেই জ্যোতিরাও ফুলে তাকে উদ্ধার করে এনে সাবিত্রী বাই ফুলের হাতে সঁপে দেন । সাবিত্রী বাই কাশিবাইয়ের নাড়ি কেটে পূত্র সন্তানের প্রসব করানোর পরে সেই শিশুটিকে নিজের কাছেই রেখে দেন ।
হরিরাম : ও হরি । সেই রাঢ়ী মাগীর শিশু সন্তানকে নিজেদের পূত্র বলে চালিয়ে যাচ্ছে সাবিত্রী বাই ?
ভোলা : হ্যা, সেই ছোট্ট ছেলে যশোবন্ত এখন পাশকরা মস্তবড় ডাক্তার । মা বাবার সাথে পিছিয়ে রাখা সমাজের সেবা শুশ্রূষা করছে, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ।
হরিরাম : আচ্ছা ভোলা ! ডাক্তার যশোবন্ত নিশ্চয়ই জানেনা যে, ও সাবিত্রী বাই ফুলের গর্ভজাত সন্তান নয়। ?
ভোলা : না জানাটাই তো স্বাভাবিক । কারণ ওর জন্মের এক মাস পরেই কাশিবাই নিজের সন্তানকে সাবিত্রী বাই ফুলের কোলে তুলে দিয়ে, কোথায় যে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল, তা কেউ জানেনা –
হরিরাম : বোম শংকর ! জয় মা ভৈরব কালী – মনি কাঞ্চন দে মা থালি থালি ।
ভোলা : কি ব্যাপার পন্ডিত মশাই ! হঠাৎ এমন উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন কেন ?
হরিরাম : ঠিক সময়ে জানতি পারবি । কতবড় ঔদ্ধত্য জানিস ! জ্যোতিরাওয়ের বাবা গোবিন্দরাও ফুলে মারা যাবার পরে ব্রাহ্মণ নাপিত দিয়ে শ্রাদ্ধ করায়নি । ব্রাহ্মণদের দান দক্ষিণাসহ ভোজন না করিয়ে কাঙালদের ভোজন করিয়েছে । নরকে যাবিরে বরাহ নন্দন – নরকে যাবি ।
ভোলা : ছি: ছি: ঠাকুর মশাই , এটা একটি গালি হলো না ।
হরিরাম : কেন হলো না । শুয়োরের মাংস তো শূদ্ররা ভক্ষণ করে ?
ভোলা : তা করে । তবে এটাও তো ঠিক মৎস কূর্ম বরাহ এরাতো আপনাদের অবতার পুরুষ ! তাই না ?
হরিরাম : হ্যা । ঠিক বলেছিস বরাহ আমাদের অবতার । তাহলে ওদেরকে গাধার বাচ্চা বলবো ।
ভোলা : তাই বলবেন । এবার বাকি খবর শুনুন – দুদিন আগে সাবিত্রী বাই ফুলের এক বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে যশোবন্তের বিয়ে দিয়েছেন জ্যোতিরাও ফুলে নিজের মারাঠি ভাষায় লিখিত মন্ত্র পাঠ করে ।
হরিরাম : বলিস কি রে ভোলা ! স্বয়ং ব্রহ্মার নিজে হাতে লেখা পুরোহিত দর্পণের বিয়ের মন্ত্রকে বাতিল করে নিজের লেখা মন্ত্রে বিয়ে দিলো ?
ভোলা : দিলো তো । আমি নিজের চোখে দেখেছি
হরিরাম : ওহ্ । গেলো গেল অস্পৃশ্য শূদ্রদের অনাচারে এই পবিত্র ভারত ভূমি রসাতলে যেতে আর বাকি রইলো না ।
ভোলা : ভারত ভূমি রসাতলে কোনদিন যাবেনা।তবে জ্যোতিরাওয়ের মত সাবিত্রী বাই ফুলেও কয়েকখানা বই ইতে আপনাদের মতো কুচক্রি ব্রাহ্মণদের রসাতলে পাঠানোর কথা লিখেছেন ।
হরিরাম : না: আর সহ্য করতে পারছি না।এবার একটা হেস্তনেস্ত করে ফেলবই
ভোলা : কি আর করবেন ! ইতিপূর্বে কতরকমের চেষ্টা করেও ওদেরকে দমাতে পারেননি । আসলে আপনাদের হিন্দু শাস্ত্র ও সংস্কৃত মন্ত্রের আর কোন শক্তি নেই । আছে শুধু মুখের তড়পানি ।
হরিরাম : ভোলা, এই কথাটি কি আমাকে বললি। ?
ভোলা : ( দুকান ধরে ) তওবা তওবা । এমন কথা আপনাকে বলার সাহস কি আমার আছে ! আমি হলাম গিয়ে আপনার হাড্ডিখোর দাসানুদাস ভোলানাথ সকপাল –
হরিরাম : হারামজাদা মাহারেরপো, তাহলে ও কথা বললি কেন ?
ভোলা : এসব কথা তো আমার নয় । ঐ সাবিত্রী বাই ফুলের । ভালো কথা, আজকে বিকালে মাহাড় পাড়ায় শতাধিক বিধবা মহিলাদের নিয়ে মিটিং করতে আসবে, সাবিত্রী বাই ফুলে । যাবেন নাকি দেখতে ?
হরিরাম : অবশ্যই যাবো । আজকেই পাড়াঢলানী, লোক ক্ষেপানী সাবিত্রী বাই ফুলের সঙ্গে শেষ বোঝাপড়া করবো । চল তুইও আমার সঙ্গে থাকবি । দেখবো লাঠির একঘায়ে সাবিত্রী বাই ফুলের মাথাটা গুরিয়ে দিতে পারিস কিনা। ? চল যাই মিটিংয়ে ( দুজনের প্রস্থান )
++ চতুর্থ দৃশ্য ++ ( সভা মঞ্চের দৃশ্য )
সাবিত্রী : নমস্কার । আমি আপনাদের সেবক শ্রীমতী সাবিত্রী বাই ফুলে । উপস্থিত পিছিয়ে রাখা সমাজের ভাই ও বোনেরা । আজকের এই বিশেষ সভাতে আমি মাত্র অল্প কয়েকটি কথা বলার জন্য এসেছি । তা হলো, এতদিনে আপনারা জেনে গেছেন, ভারতে বৌদ্ধ যুগেরপর থেকে ব্রাহ্মণরা ভগবানের ভয় দেখিয়ে, শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নারী এবং শূদ্রদের উপর অত্যাচার ও শোষন চালিয়ে যাচ্ছে । নারীদের দাবিয়ে রাখার জন্য ব্রাহ্মণরা বলেছে – নারী মাত্রই শূদ্রানী, লোভী, বাঁচাল, কামুক, অপবিত্র আরো অনেক অপমানজনক শব্দ প্রয়োগ করেছে । পুরোহিত ব্রাহ্মণরা শিশু জন্মাবার আগে থেকে মৃত্যুর পরও শাস্ত্রের আদেশ বলে নানাবিধ কুসংস্কার ও পুজা পার্বনের নামে শোষন করে বেঁচে আছে । এমন বিনা পুঁজিতে ব্যবসা আর কোনো ধর্মে নেই ।আপনারা ব্রাহ্মণরা ওদের সংস্কৃত পাঠশালায় আমার সমাজের ছেলে মেয়েদের প্রবেশ করতে দেয়নি । একমাত্র বৌদ্ধ যুগে অবহেলিত বঞ্চিত জনেরা লেখা পড়া শিখে ব্রাহ্মণ্যধর্মের শোষন থেকে বেশ কিছুদিন মুক্তি পেয়েছিল । আর বর্তমানে ইংরেজ মিশনারীদের সহায়তায় সর্বধর্মের সর্বস্তরের ছেলে মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে । আমরাও ওদের সহযোগিতায় সেবা প্রকল্পগুলো চালাতে পারছি । এবং উচ্চকন্ঠে বলতে পারছি – হাম ভারত কি নারী হ্যায় , ফুল নাহি চিঙ্গারী হ্যায় ।
আমার স্বামী তাতিয়াজী বলেন – শিক্ষার অভাবে বুদ্ধি হ্রাস প্রাপ্ত হয় । বুদ্ধির অভাবে নৈতিকতা ক্ষয় হয় । নীতির অভাবে উন্নতি থেমে যায় । উন্নতির অভাবে ধন বিলুপ্ত হয় , অর্থের অভাবে শূদ্র ধংস হয় ।
বিশেষ করে যে সুসংবাদটি আপনাদেরকে জানাতে এসেছি, তাহলো আমরা ক্ষৌরকার ভাইয়েদের নিয়ে যে সংগঠন তৈরি করেছি তার মহাসভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, বোম্বাইয়ের এলফিনস্টোন হাইস্কুল প্রাঙ্গণে । সেখানে সহস্রাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল । সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভবিষ্যতে ক্ষৌরকার ভাইয়েরা আর কোনো বিধবার মস্তক মুন্ডন করবে না ( তালিয়া )
আর একটা কথা, আমরা আরো কয়েকটি ছাত্রাবাস তৈরি করেছি । সেখানে দুই হাজার শিশুর খাওয়া দাওয়া, দেখভালের দায়িত্ব “মহিলা সেবা দলের”সভ্য হিসেবে আপনাদেরই নিতে হবে । সেই সঙ্গে আপনাদেরকেও লেখা পড়া শিখতে হবে । যাতে নিরক্ষরদের শিক্ষা দান করতে পারেন । ভেবে দেখুন, আমাদের মাতৃসমা সুগানাদিদি আমাদের দুজনকে যদি শিক্ষার উৎসাহ না দিতেন তাহলে আমরা মুক ও বধির হয়ে থাকতাম । তাই তাকে এবং ফাতিমা শেখকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের সভা শেষ করছি । ( প্রস্থান )।
নেপথ্যে শ্লোগান :-সাবিত্রী বাই ফুলে কি কহনা হ্যায়, শের বনকে রহনা হ্যায় । ক্রান্তীজ্যোতি মাতা সাবিত্রীবাই ফুলেজী জিন্দাবাদ – জিন্দাবাদ ।।
+++ পঞ্চম দৃশ্য +++পথের দৃশ্য
হরিরাম : ক্রান্তীকারী মাতা সাবিত্রীবাই জিন্দাবাদ -জিন্দাবাদ । থুড়ি থুড়ি বোম শংকর ।
সাবিত্রী বাইয়ের লোক ক্ষেপানী ভাষন শেষ । এইবার এই পথ দিয়েই সাবিত্রী ফিরবে । এখানেই হারামজাদির চুলের মুঠি ধরে টেনে ধরবো । না না চুল ধরলে তো আমার জাত চলে যাবে । যায় যাবে । কৈরে ভোলা – কোথায় গেলি ?
ভোলা : ( প্রবেশ ) কোথাও যাইনি তো ( কেনে আঙ্গুল দেখায় ) এটা মানে হিসু করতে গেছিলাম
হরিরাম : ওটা আমারও পাচ্ছে কিন্তু – ভোলা তুই রেডি তো ?
ভোলা : পন্ডিতজী, আপনাদের বোঝাপড়ার মধ্যে আমার না থাকাই ভালো
হরিরাম : কেন! তুই কি সাবিত্রী বাইকে ভয় পাচ্ছিস ?
ভোলা : না তা নয় । আসলে আমাকে চেনে তো –
হরিরাম : তাতে কি হয়েছে, সাবিত্রী বাই জানুক ওদের সত্যশোধক সমাজেও আমাদের গুপ্তচর আছে ।
ভোলা : পন্ডিতজী ঐ যে সাবিত্রী বাই একাই এদিকে আসছেন । ধরুন ওকে ( প্রস্থান )
হরিরাম : ( দুহাতে পথরোধ করে ) ধরেছি – ধরেছি
সাবিত্রী বাই : একি এ ভাবে আমার পথরোধ করে দাঁড়ালেন কেন ?
হরিরাম : তোমাকে শেষ বারের মতন সাবধান করতে এসেছি । হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ মূলক কথাবার্তা, লেখালেখি বন্ধ করো । ন ই লে খুব খারাপ হবে ।
সাবিত্রী বাই : আমরা তো আপনাদের গালিবাচক হিন্দু ধর্মকে ধর্ম বলে আমরা মানিই না । আমরা মানবতাবাদী ধর্মে বিশ্বাস করি । তাছাড়া অতীতে অনেকবার আমাকে ও তাতিয়াজীকে সাবধান করেছেন।মনে পড়ছে ?
হরিরাম : না মনে পড়ছে না
সাবিত্রী বাই : সেকি ! একাধিক বার মুখে সাবধান করা সত্ত্বেও যখন কোন লাভ হয়নি, তখন দুজন ভাড়াটে খুনিকে পাঠিয়েছিলেন আমার স্বামীকে খুন করতে । সেই খুনি রোদি ও ধোন্দী আপনার কুকীর্তির কথা জানতে পেরে এখন তাতিয়া সাহেবের দেহরক্ষীর কাজ করছে ।
হরিরাম : ঐ ছোট জাতের বাচ্চারা আমার টাকা খেয়ে বেইমানি করেছে
সাবিত্রী বাই : করবেই তো । আপনারা মাহার মংদের অস্পৃশ্য মনে করেন । ওদের ছোঁয়া লাগলে, ওদের ছায়া মাড়ালে আপনাদের জাত অপবিত্র হয়ে যায় । ওদের আপনারা মানুষ হিসেবে গণ্য করেন না । সেই কারণেই ওরা দলে দলে খ্রীষ্টান হয়ে যাচ্ছে । সেজন্য আপনাদের কোন আফসোস নেই । এতোই হীন মনোবৃত্তি আপনাদের
হরিরাম : ছোট জাতের লোকগুলোকে তোরাই খেপাচ্ছিস আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে।এসব বন্ধ কর । ন ইলে –
সাবিত্রী বাই : আবার খুনি নয়তো গুন্ডা পাঠাবেন ! না ভট্ট মহারাজ, সে ভুলটি আর করবেন না । কারণ আজকে আমাদের সাথে অগনিত ছেলে মেয়েরা আছে । আর আছে তাদের বাবা মায়েরা । যারা ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনাদের মোকাবেলা করতে।আর আছে আমাদের ছেলে ডাক্তার যশোবন্ত ।
হরিরাম : ও হ্যা, যশোবন্তের সঙ্গে দেখা করে ওকে জানিয়ে যাবো, তুমি ওর আসল মা নও , পালিতা মা । আসলে যশোবন্ত জারজ সন্তান ।
সাবিত্রী বাই : ( হেসে ) যশোবন্ত এসব কথা জানে এবং এও জানে আপনার এক বন্ধুর কুকর্মের ফলে ওর জন্ম । কাজেই বুঝতেই পারছেন কি প্রচন্ড ঘৃণা আপনাদের প্রতি যশোবন্তের ।
হরিরাম : তাহলে তোরা লোক ক্ষেপানো বন্ধ করবি না ?
সাবিত্রী বাই : না করবো না ।
হরিরাম : ( গোবর হাতে তুলে ) তবে এই গোবর মাখিয়ে দিলাম তোর মুখে ও সারা শরীরে ।
সাবিত্রী বাই : ভট্ট মশাই, আমি এই পুনা শহরের নিরক্ষরদের শিক্ষাদানের ব্রত গ্ৰহন করেছি, অনাথ মা বোনেদের সেবার প্রকল্প চালাচ্ছি।তারই ফল স্বরূপ আমাকে উৎসাহিত করার জন্য হিন্দুদের পবিত্র গোবর আমার শরীরে ছড়িয়ে পক্ষান্তরে আমাকে আর্শীবাদ করলেন । সে জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
হরিরাম : কি ! আমাকে ব্যাঙ্গ করছিস ! তবে দ্যাখ্ এই পৈতা ছুঁয়ে তোকে আমি অভিশাপ দিচ্ছি – তোর কুষ্ঠ হোক, বাতের ব্যামো হোক , কালাজ্বর হোক, ভেদবমি হোক –
ভোলা : ( লাঠি হাতে ) আরে আরে থামুন ভট্ট পন্ডিত মশাই।এর পরেই তো রাগের মাথায় বলে ফেলবেন – তোকে আমি এক্ষুনি ভস্মীভূত করে ফেলব ।
হরিরাম : বলবোই তো । ওঁং: ব্রহ্ম দেবায় ভস্মীভূতম
সাবিত্রী বাই : ( হেসে ) ভট্ট মশাই, একটা প্রবাদ আছে – শকুনের অভিশাপে কক্ষনো মানুষ তো ছাড় , একটা গরুও মরে না । চলি ( প্রস্হান )
হরিরাম : কি আমাকে শকুন বলে গালাগালি দিয়ে গেল ? ওকে আমি ওঁং ব্রহ্ম দেবাং সর্বশক্তি দাতাং অহম শক্তি দায়ং ,করুণা করং –
ভোলা : আহা আহা করেন কি।সংস্কৃত মন্তর গুলো স্টকে থাকুক, অশিক্ষিত ব্রাত্যজনেদের জন্য । সাবিত্রী বাই যে আপনাকে গালি দিয়েছে তা কেউ তো শোনেনি । তাছাড়া বাড়িতে গিয়ে একটু গঙ্গাজল,গায়ে ছিটিয়ে গোবর ও চোনা খেয়ে নেবেন । তাহলেই পবিত্র হয়ে যাবেন ।
হরিরাম : শোন ভোলা, ওদের দুজনের জন্য আমার যজমানি, সুদ, তুকতাক, জ্যোতিষী , গুরুগিরি ব্যবসা , টোল বন্ধ হয়েছে । মানে মান সম্মান গেছে ।
ভোলা : আজ্ঞে – তা গেছে ।আরো যাবে –
হরিরাম : শোন ভোলা, তুই আরো ঠ্যাঙারে লোকজন নিয়ে জ্যোতিরাও সাবিত্রী বাইয়ের সবকটি স্কুল, আশ্রম ও প্রতিষ্ঠানে আজকেই আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিবি । যত টাকা লাগবে আমি দেবো । যা ভোলা এক্ষুনি যা , আগুন জ্বালিয়ে আমার বুকের জ্বালা মেটা ভোলা –
ভোলা : আমাকে মাফ করবেন পন্ডিত মশাই । জ্যোতিরাও ফুলে, পুনা শহরে প্রথম যে বাড়িতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, তার মালিক খাঁটি ব্রাহ্মণ তাতিয়াজী ভিটে । শিশু প্রতিরোধ গৃহটি যে বাড়িতে নির্মিত হয়েছে, তার মালিক ওসমান শেখ । তাঁদের মত পরপোকারী দয়াবান উদার হৃদয়ের মানুষের বাড়িতে আমি আগুন লাগাতে পারবো না । তাছাড়া আপনি হয়তো জানেন না, ঐ সকল স্কুলে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়ের অল্প সংখ্যক ছেলে মেয়েরা ও শূদ্র ছেলে মেয়েদের সঙ্গে পড়াশোনা করে । অনাথ আশ্রমে ব্রাহ্মণ বাড়ির পরিত্যক্ত বিধবা মহিলাদের সংখ্যাই বেশি । তাদেরকে আপনারাই কুলটা বানিয়েছেন
হরিরাম : বানিয়েছি বেশ করেছি।তুই যা আগুন জ্বালা-
ভোলা : আমি এ কাজটি করতে পারবোনা । আপনি অন্য কাজ বলুন,তা এক্ষুনি করে দেবো
হরিরাম : তোর বাড়ি ঘর জমি জমা সব আমি তোকে ফিরিয়ে দেবো, সুদ মুকুব করে দেবো
ভোলা : পন্ডিত মশাই আমাকে –
হরিরাম : তোকে আমি দশ একর জমি দান করবো । এই নে দিয়াশলাই ( ভোলা কম্পিত হাতে দিয়াশলাইটা নেয় ) ভোলা সারা জীবনে তোদের আর কোন দু:খ অভাব থাকবে না । যা এগিয়ে যা ভোলা –
ভোলা : ( কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ) আমি কি করে আগুন জ্বালাবো ! সাবিত্রী মায়ের স্কুলে যে আমার ছেলে মেয়ে ও বৌ পড়ে পন্ডিত মশাই । আমি কি করে ওদেরকে পুড়িয়ে মারবো । আমি তো আপনার মতো নির্দয় পাষন্ড ন ই । আমি যে অতি সাধারণ খেটেখাওয়া একজন কষ্টজীবী মানুষ ।
হরিরাম : ( লাথি মারে ) তবে দূর হয়ে যা, আমার সামনে থেকে । আমিই নিজের হাতে আগুন লাগাতে যাচ্ছি ( প্রস্থানোদ্দক )
ভোলা : ( হঠাৎ বর্জকন্ঠে ) সাবধান ভট্ট বাবনার পো । আর কোনদিন যদি সাবিত্রী বাই এবং জ্যোতিরাও ফুলের ক্ষতি করার চেষ্টা করো , তাহলে এই লাঠি দিয়ে তোমার ভবলীলা সাঙ্গো করে আমি জেলে যাবো । বলে দিলাম ।
( ভোলা লাঠি উঁচু করে।হরিরাম ভয়ে শিউরে উঠে স্টাচু হয়ে যায় )
– – – – – – – – – – – –