Kalyani Thakur Charal

কল্যানী ঠাকুর চাঁড়ালের অনুগল্পঃ পাখী প্রেমী

পাখী প্রেমী

-কল্যানী ঠাকুর চাঁড়াল

অনিসুরের বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ায়। ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি তার শখ।শাশ্বতীর কুষ্ঠিয়ার সাথে যোগ আছে। ওখানকার লালনপ্রেমী মুক্তমনা মুসলমানরা তার বন্ধু। লালনের জন্মোৎসবে না হলেও লালন মাজারে অনেকবার গেছে। সেবার ঢাকের বাদ্যিবাজা দূর্গাপুজো দেখবে বলেই  বাংলাদেশের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিল। তাতে তার যা আশাভঙ্গ হয়েছিল সে আর বলার না।

শাশ্বতীতো উঠেছে আডুয়াপাড়া ‘ছায়ানীড়ে’। বাড়িওয়ালী আপার যত্নে ভালই আছে। তবে তার কিছু পাগলামোও আছে, সেকথা থাক। কুষ্ঠিয়া মানে তো আর কুষ্ঠিয়া বেড়ানো নয়। কুষ্ঠিয়া মানে শিলাইদহ, মেহেরপুর, মুজিবনগর, লালন মাজার, কাঙ্গাল হরিনাথ, মীর মোশারফ হোসেন, মোহিনী মোহন কাঞ্জিলালদের মোহিনী মিলের মিলপাড়া, টেগোর লজ আরও নানান সব ঐতিহাসিক জায়গা।

শাশ্বতী ঘুম থেকে উঠে কলকাতায় যেমন বেরিয়ে পড়ে হাঁটতে, সকালে উঠে আডুয়াপাড়ার মধ্যে দিয়ে সোজা মিলপাড়ার মধ্যেদিয়ে হেঁটে লা্লন মাজারে পৌঁছে গেল। লালন মাজারে তখন ঝাড়পোছ চলছে। হঠাৎ এমন একজন অপরিচিত, যার হাবেভাবে বোঝা যায়সে এ অঞ্চলের না, তাকে দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাঁইজী খুব একটা খুশি নয়। এ সময়ে সচরাচর দর্শকরা কেউ আসে না।

কিছুক্ষণ ঘুরে শাশ্বতী ফিরে আসে একই রাস্তা দিয়ে। তখন সবে অন্যান্য ভবঘুরে বাউলরা ঘুম থেকে উঠে প্রাতকৃত্যে ব্যস্ত। দূর্গাপুজোর স্বপ্নভঙ্গের কথা ত জানা হল না, সে এক মজার ব্যাপার। মিলপাড়ার কাছাকাছি যে দুটো পুজো হচ্ছে সেখানে ঢাকের বাদ্যির তো নামগন্ধ নেই। লাইট জ্বলছে আর নিভছে, তার সাথে জোরে জোরে হিন্দি ডিজে চলছে।

অথচ কেমন একটা ছোট্ট সবুজ গ্রাম, তার পাশে নদী, দূর থেকে শোনা যাবে ঢাকের বাদ্যি আর কয়েকটি গ্রামের মধ্যে শুধুমাত্র ঐ একটি গ্রামেই একখানা চালচিত্রওয়ালা দূর্গাঠাকুর। নৌকোয় করে কয়েকজন মিলে নদীর ঘাটে নামাবে,আবার ওই ঘাট দিয়েই বিষর্জন দিতে নিয়ে যাবে। শাশ্বতীর এমন স্বপ্ন কল্পনায় একেবেরে জল ঢেলে দিয়েছে এ পাড়ার পুজো। এতো কলকাতার পুজোকেও হার মানাবে।

ফিরে এসে শাশ্বতী নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফেসবুকে তার একদল বাংলাদেশি বন্ধু। আনিসুরও তার মধ্যে একজন। আনিসুর পাখীপ্রেমী। রঙ বেরং পাখীর নানা মুডের ছবি পোষ্ট করে, শাশ্বতী তা দেখে মন্তব্য করে। কখনও লাইক দেয়। আনিসুরের কিছু গল্পও থাকে ছবির সাথে। সেবার কিছু ছবি দিয়েছে, পরপর কয়েকটি গাছে ছোট ছোট ভাড় রেখে দিয়েছে, তাতে পাখিরা এসে বাসা বাধে। ছবি দেখে শাশ্বতী মোহিত। এমন পাখির মনস্তাত্তিক মানুষ আহা না জানি কি ভাল!

এবারের পোষ্টটা বেশ অভিনব। জঙ্গল পেরিয়ে অনেক ঘুরে বেশ কিছু বনের বিভিন্ন জাতের পাখির ছবি নেওয়ার পর, সারাদিন ঘোরার পর জম্পেস করে বন মুরগির ঝোল আর গরম ভাতের গল্প।

শাশ্বতী থমকে গেল। অনেক্ষন কোন পোষ্ট করার জন্যে তার আঙ্গুল নড়ল না। মুখে হাত দিয়ে থম হয়ে বসে থাকল। তারপর লিখল, বনমুরগীও পাখি।

আর কখনও আনিসুরের পোষ্টে হাত দেয় না সে।

[ ‘চতুর্থ দুনিয়া’ আগষ্ট, ২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত]

আপনার কেমন লাগলো?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

1 Comment

  1. পাখিপ্রেমী গল্পটা সুন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *