কুলীন

বর্ণময়কুলীনপ্রথাঃএক বিরল সামাজিক ব্যবস্থা

বর্ণময়কুলীনপ্রথাঃএক বিরল সামাজিক ব্যবস্থা

অতুলকৃষ্ণ বিশ্বাস, পি.এইচ. ডি.

শ্রদ্ধা এবং উৎসাহের সঙ্গে ৮ই ২০২২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালিত হয়েছে, যা সংবেদনশীল মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি।নারী প্রগতির স্তর এবং দিশাদিয়েই যে-কোন প্রগতিশীল সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নতি নির্ধারিত হয়ে থাকে। ডঃ বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর এমন কথাই বলেছেন।

“I measure the progress of a community by the degree of progress which women have achieved.”

ডঃ আম্বেদকরের মতে, কোনও দেশের প্রগতি নারীর উন্নতির মাপদণ্ডে বিচার করতে হবে। অর্থাৎ  নারীর প্রগতি বাদ দিয়ে কোনদেশের উন্নতির মূল্যায়ণ অসম্ভব। পুরুষের শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নারী শিক্ষা যদি একই ভাবে ত্বরান্বিত করা যায় তবেই সমাজ এবং দেশের প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। আম্বেদকর আরো বলেনঃ –

“We shall see better days soon and our progress will be greatly accelerated if male education is persuaded side by side with female education.”

রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগদের যুগে বাঙালী সমাজ নারী শিক্ষার অনড় প্রতিরোধ সৃষ্টি ক’রেছিল। বাঙালীর এক শ্রেণী একদিকে রেনেসাঁরজয়গানক’রেছেন,অন্য দিকে তারাই নারী এবং সমাজের অনগ্রসর ও অস্পৃশ্যদের শিক্ষার বিরুদ্ধেদুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর নির্মাণক’রেছিলেন। নিরক্ষর মেয়েদের শিক্ষা লাভের স্বপ্ন ব্যর্থ করতে তখন বিবেকহীনপ্রচার করা হত যে,লেখাপড়া শেখা মেয়ে বিধবা হবে। নারীশিক্ষা বিরোধী প্রচার এত দূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল যে, তখন প্রচার চালানো হত যে,শিক্ষিতা মেয়ের জরায়ু শুকিয়ে সন্তান ধারন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। এই ছিল রেনেসাঁ যুগের প্রবুদ্ধ বাঙালীর ঘুণ ধরা মানসিকতা। বিংশতাব্দীতে দশকের পর দশক তাঁরা মনন থেকে এই জং কাটিয়ে উঠতে পারেন নি।

আমেরিকান লেখিকা সঠিক মুল্যায়ণ করে মাথার ইন্ডিয়া বইয়ে লিখছিলেন, কালকেই যদি ভারতকে স্বরাজ প্রদান করা হয়, এবং এত অর্থ সম্পদ ভারতের জন্য বরাদ্দ করা হয়, অথাপি দেশের অস্পৃশ্য এবং নারীজাতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীরআমূল পরিবর্তন না করবে, ভারত তত দিন নিরক্ষর মহাবিশ্বের প্রথম সারিতে অনড় হয়ে বিরাজমান থাকবে। তাঁর ভবিষ্যৎ বানী শুনুন—

“…if Indian self-government were established tomorrow, and if wealth tomorrow rushed in, succeeding poverty in the land, India, unless she reversed her own views as to her “Untouchables” and as to her women, must still continue in the frontline of the earth’s illiterates.” 

Katherine Mayo, Mother India, 31st edition, New York, 1931, p. 202.

গ্রাম ভারতেনিরক্ষতার ছবি আজোক্যাথারিনমেয়োরসতর্কবানীরএই অবিকল সত্যতার প্রতীক। গান্ধীদের  আমরা আজো বলতে পারিনি নিরক্ষর দেশের দুর্ভাগ্যের কারণ তাঁরা—তাঁরা চাননি গ্রাম ভারত শিক্ষিত হোক।

মেয়োর মাদার ইন্ডিয়া মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভীষন অপছন্দ। তিনি এবং ভারতের আরো অনেক মহাপুরুষ —বস্তুত লেখিকার বিরুদ্ধে বিষোদ্গারশুরু করলেন—তাঁদের শ্রীমুখ থেকে নর্দমা প্রবাহিত হতে লাগলো। গান্ধীজী আগেই ফতোয়া জারি করেছিলেন, চাষা কেন লেখা পড়া শিখবে? দুই অক্ষর লিখতে পড়তে পারলে চাষার কি এক ইঞ্চি সুখ বৃদ্ধি হবে? কী তাঁরঅনুপম জ্ঞান, দর্শন, নীতি কথা! রাতারাতিতিনি নিজেকে মহাত্মা এবং জাতির জনক হবার রাস্তা বা ট্রাকেযাত্রা শুরু করলেন। ভারত পেল এক ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়াশীল নেতা, তাকে মাথায় তুলে উদ্বাহু নৃত্য শুরু হল।

আসলে ভারতে যিনি জনগণের শিক্ষার বিরোধিতা করেছেন, তিনিই ভারত দর্শনেমননে পুণ্যাত্মা। বিদ্যাসাগর,  গান্ধী, বাল গঙ্গাধর তিলক, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী তাঁদেরদুইচার উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। এমন মানুষ গণশিক্ষার শত্রু শুনলে অনেকে ক্ষিপ্ত হবেন সেই সম্ভাবনা মনে রেখেও এ কথা বলছি। সেই হিসাবে ক্যাথারিন মেয়ো ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু, হিতাকাঙ্ক্ষী।

         বাঙলা একদাঅনৈতিক প্রচারের সুতিকাগার ছিল; যারপশ্চাতে ঐতিহ্যবাহীকুটিরশিল্পের অসামান্য ভূমিকা ছিল।কুটিরশিল্প বলতে সংস্কৃত শ্লোকের উর্বর ক্ষেত্র ছিল বাঙলা। শ্লোকউৎপাদনশীলতার গগন ছুঁয়েছিল। ভারতবর্ষ পত্রিকায় অনিলা দেবীর “ধর্ম-সমাজের মূল্য” প্রবন্ধে মনোহারীশ্লোক শুনুনঃ 

“আমিষাসবসৌরভ্যহীনং যস্য মুখং ভবেৎ।

প্রায়শ্চিত্তী স বর্জ্যাশ্চপশুরেব ন সংশয়ঃ।। ”

তাঁর অনুবাদঃ “চব্বিশ ঘন্টা মুখে মদ-মাংসের সুগন্ধ না থাকিলে সে একটা অন্ত্যজ জানোয়ারের সামিল।” লেখিকা জানাতে ভোলেন, এই পুণ্যশ্লোকের রচয়িতা বলেছেন, “এ কথা ভগবান মহাদেব বলিয়া দিয়াছেন!” তাঁর মতে,

“হিন্দুর শাস্ত্ররাশি (এমন) অধঃপাতিত হইয়াছে। নিছক নিজের সুবিধার জন্য কত যে রাশি রাশি মিথ্যা উপন্যাস রচিত এবং অনুপ্রবিষ্ট হইয়া হিন্দুর শাস্ত্র ও সমাজকে ভারাক্রান্ত করিয়াছে, কত অসত্য যে বেনামীতেপ্রাচীনতার ছাপ মাখিয়া ভগবানের অনুশাসন বলিয়া প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে, তাহার সীমা পরিসীমা নাই। জিজ্ঞসা করি, ইহাকে মান্য করাও কি হিন্দুশাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা করা? [(শ্রীমতিঅনিলা দেবী, ভারতবর্ষ, জৈষ্ঠ্য ১৩২৩,)শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ধর্ম-সমাজের মূল্য, শরৎ রচনাবলীজন্মশতবার্ষিকী সংস্করণ, তৃতীয়খন্ড, ৩১ শ্রাবণ ১৩৮৩, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ৪১৪।]

নিছক নিজের সুবিধার জন্য কত যে রাশি রাশি মিথ্যাকহিনী তারা রচনা করে সমাজকে পঙ্গু করেছিল, মানুষকেকরেছিলঅথর্ব; জীবনকে ভাগ্য নির্ভর।এই ভ্রষ্ট, নীতিহীনসংস্কৃতজ্ঞদেরজাহার হাজার একর জমি জমিদান করে তাঁদের সমাজ পালন-পোষনক’রেছে। একাকী নদীয়ার জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র রায় ১৮,০০,০০০ বিঘা জমি ব্রাহ্মণদের দান করেছিলেন। শরৎচন্দ্রচট্টোপাধ্যায় যাদের অসত্যের প্রতি আঙ্গুল তুলে বলেছেন, বেনামীতেপ্রাচীনতার ছাপ মেখে ভগবানের অনুশাসন বলে অচল সিকির মত চালাতে চেষ্টা করেছিলেন, তারাই কৃষ্ণচন্দ্রের দানে পুষ্ট হয়েছিলেন। দানময়ুখ নামে শাস্ত্র রচিত হয়েছিল সেখানে জমিদানেরমহাপূণ্য বর্ণনা করা হয়েছে।

সাহিত্যের ইতিহাসের ছাত্রছাত্রী, গবেষকগণ জানেন, অনিলা দেবীর ছদ্মনামে শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ রচনা করেছেন। শাস্ত্র এবং শাস্ত্র রিচয়িতাদেরমহিমা প্রচারে  শরৎ চন্দ্রের উক্তি সমাজের সম্পদ, আবালবৃদ্ধবনিতার জানা উচিত। মন্দির,দেবদেবতা, ব্রাহ্মণ্য আস্ফালন, ভাগ্যফল, দৈবশক্তি সব কিছুই কপোলকল্পিত শাস্ত্রজাত; যা বিশ্বাস ক’রে কোটিকোটিহিন্দু প্রতারিত হয়েছে।প্রতারিত কোন হিন্দু লজ্জিত বা অনুতপ্ত নয়।

    কুপ্রথা কবলিত কুলীন সমাজে বহুবিবাহ ছিল এক দুরারোগ্য ব্যধি।সেই ব্যাধি একশ্রেণীর ভারী আসক্তির কারণ ছিল।  বহুবিবাহউন্মূলনের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর আন্দোলন চালাতে হুগলি জেলার বহুবিবাহিতকুলীনেরনাম, বিবাহের সংখ্যা, গ্রামসঙ্কলন করেছিলেন। সেই তালিকার নির্বাচিতউদাহরণ [সারনি-১] দ্রষ্টব্য।         

সারনি-১

হুগলি জেলায় বহুবিবাহক’রে যারা বিদ্যাসাগরের নজর কেড়েছিলেন,

তাদের নাম, বিবাহের সংখ্যা, বয়স এবং গ্রাম

    নাম         বিবাহের সংখ্যা            বয়স         গ্রাম

ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়         ৮০                      ৫৫ বসো

ভগবান চট্টোপাধ্যায়                ৭২                     ৬৪          দেশমুখো

পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৬২                            ৫৫          চিত্রশালী

মধুসূদন মুখোপাধ্যায়               ৫৬                             ৮০          চিত্রশালী

তিতুরামগাঙ্গুলি         ৫৫                            ৭০          চিত্রশালী

রামময় মুখোপাধ্যায়     ৫২                    ৫০          তাজপুর

বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় ৫০                    ৬০          ভুইপাড়া

শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ৫০                    ৬০          পাখুড়া

নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০                    ৫২          ক্ষীরপাই

ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৪                    ৫২          আঁকশি-পাকুড়া

যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪১                                ৪৭          চিত্রশালী

শিবচন্দ্র মুখোপাধ্যায়             ৪০                                ৪৫ তীর্থা

রামকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়         ৪০                           ৫০           কোননগর

শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়         ৩০                     ৪০             চুঁচুড়া

ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায়          ৪০                                 ৫৫           দণ্ডিপুর     

নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়        ৩৬                                 ৪৪           গৌরহাটি

রঘুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়          ৩০                                  ৪০           খামারগাছি  

শশিশেখর মুখোপাধ্যায়        ৩০                                  ৬০             খামারগাছি             

তারাচরণ মুখোপাধ্যায়         ৩০                                 ৩৫            বরিজহাটি

ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়        ২৮                                 ৩০            গুড়াপ

শ্রীচরণ মুখোপাধ্যায়           ২৭                                 ৪০            সাঙ্গাই

কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়         ২৫                                 ৪০              খামারগাছি                         

ভবনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়       ২৩                                 ৪০            জাঁইপাড়া                

মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়        ২২                                 ৩৫             খামারগাছি

গিরিশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়      ২২                                 ৩৪             কুচুন্ডিয়া

প্রসন্নকুমার চট্টোপাধ্যায়      ২১                                 ৩৫             কাপসিট

পার্বতীচরণ মুখোপাধ্যায়      ২০                                 ৪০               ভৈটে

যদুনাথ মুখোপাধ্যায়         ২০                                  ৩৭             মাহেশ

কৃষ্ণপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়      ২০                                  ৪৫             বসন্তপুর

হরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়        ২০                                  ৪০             রঞ্জিতবাটি

রমানাথ চট্টোপাধ্যায়         ২০                                 ৫০              গরলগাছা

অন্নদাচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়       ২০                          ৪৫             ভৈটে

প্রথম তালিকায় বিদ্যাসাগর এমন ১৩৩ জনের নাম সংযোজন করেন, যাদের প্রত্যকেরবিবাহ সংখ্যায় ২০ বা তার অধিক। ১১৩ জন বহুবিবাহিত হলেও, ৩২ জন ২০টি বা উচ্চতর সাফল্য অর্জন করেছিলেন। যাদের বিবাহের স্কোর ২০’র কম তাঁদের উপরে তালিকাভুক্ত করিনি। [বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ, বহুবিবাহ,দ্বিতীখন্ড সমাজ, বিদ্যাসাগর স্মারক জাতীয় সমিতি, ২০শে আগষ্ট, ১৯৭২, পশ্চিমবঙ্গনিরক্ষরতাদূরীকরণ সমিতি, কলিকাতা, পৃষ্ঠা ২০১-২০২।]

নিজ ব্যয়ে এবং পায়ে হেঁটে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ঘুরে বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। কলিকাতার ৫-৬ ক্রোশ মাত্র দূরের জনাই গ্রামের ৬৪ কুলীনেরতালিকা বিদ্যাসাগর রচনা করেছিলেন।তারা সকলেই বহুবিবাহিত কুলীন। জনাই গ্রামের বিশেষত্ব, সেখানে“সকল ব্যক্তি একাধিক বিবাহ করিয়াছেন।”  [উপরোক্ত বিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ, পৃষ্ঠা ২০৬-২০৮।]    

উনবিংশ শতাব্দীর কুলীন সমাজে বহু বিবাহ দগদগে সামাজিক বিড়ম্বনার ইতিহাস। এই অধ্যায় সম্ভবতঃআমাদের বর্তমান প্রজন্মের অনেকের অজানা। অভিজাত সমাজের এইসম্ভ্রান্তপ্রথা উচ্ছেদের আশায়১৮৬৬ সালে ঔপনিবেশিক সরকার এক কমিটি নিযুক্ত করেছিল। ভূকৈলাশের জমিদারসত্যশরন ঘোষাল, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারকঈশ্বরচন্দ্র শর্মা [বন্দ্যোপাধায়],পাথুরিঘাটার জমিদাররাজা রমানাথ ঠাকুর, উত্তরপাড়ার জমিদারজয়কৃষ্ণমুখার্জী,রাজা দিগম্বর মিত্র, সি. পি.হবহাউজ এবং এইচ. টি. প্রিন্সেপ বহুবিবাহ প্রথার নানা বিষয় নিয়ে সমীক্ষা করেন।গেজেট অফ ইন্ডিয়ায় ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৭ খ্রীষ্টাব্দে কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কমিটি কুলীন প্রথার স্বরূপ ১৭টি ভাগে সঙ্কলিত করেছিলেন।সম্ভ্রান্ত বাঙলীসমাজচিত্রের মূল্যায়ণস্বয়ং পাঠক করুন ।

“১।  হিন্দু বিবাহে সাধারণতঃ সে সকল উপহার-উপঢৌকন দেওয়া হয়, তা ছাড়াও ভঙ্গকুলীন বর পণও আদায় ক’রে ছাড়ে। তবে বদলী বিবাহ সম্পর্কে এই ব্যবস্থার একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে থাকে। 

২। মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়ী থেকে প্রায়শঃ উপহার দিয়ে জামাইকে খুশী রাখা হয়। কুলীন জামাই যখন শ্বশুরবাড়ী পদার্পণ করেণ তখন তাঁকে বিশেষ ও বিশিষ্ট্যউপহারাদি দিয়ে তুষ্ট করতে হয়। 

৩। ভঙ্গকুলীনের দ্বিতীয় বা তৃতীয় থাকের মেয়ে সঙ্গে সমগোত্রীয় বরের সাথে বিবাহ দিতে না পারলে আজীবন তারা        অবিবাহিত থাকেন। 

৪। একজন কুলীনের ১৬, ২০, ৪০, ৬০, ৮০ জন পত্নীলাভকরেন।  

৫। ভঙ্গকুলীনের বহুবিবাহজীবিকার অর্জনের মাত্র উপায়।

৬। বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কুলীন বিয়ে করতেন। বিবাহের পর স্ত্রীকে তার স্বামী দ্বিতীয়বার কখনো দেখেন নি। কোনও কোনও           স্বামী তিন চার বছরে এক বার স্ত্রীকে দর্শন দেন।

৭। কুলীন বর এক দিনে তিন বা চার বিবাহ করেছেন। একদিনে তেইশ বিবাহ করেছেন এমন কুলীনের এমন রেকর্ডও কমিটির সামনে এসেছিল!

৮। কোন এক কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা নিজের সব ক’টা মেয়েকে একই যে-কুলীন বরের সাথে বিয়ে দিয়েছেন; আবার তাঁরই সাথেইনিজের সব ক’টা অবিবাহিতা বোনেদেরও ঐ ভাগ্যবান কুলীন বরের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন!

৯। উপযুক্ত ঘরের বর না জুটলে অনেক কুলীন কনে আজীবন কুমারী থেকে যান। সংখ্যায় তারা নগণ্য নন। 

১০। বিবাহিতা এবং অবিবাহিতা কুলীন কন্যা এবং স্ত্রীদের জীবন এক নিরবিচ্ছিন দুঃখ, অবহেলা, মাত্রাতিরিক্ত মানসিক              যন্ত্রণাময় সফর। সাধারণতঃ নিকৃষ্ট পাপাচার, যথাব্যাভিচার, গর্ভপাত, শিশুহত্যা, গণিকাবৃত্তি কুলীন বিবাহের পরিণতি।   

১১। এক একজন কুলীন ৮২, ৬৬, ৬০ এবং ৪২ বার বিবাহ করেছেন। তাঁরা যথাক্রমে  ১৮,  ৮২, ৪১, ২৬, ৮২ পুত্র;     ২৬, ২৭, ২৬, ১৬ এবং ১৬ কন্যার জন্মদাতা।

১২। বর্দ্ধমান এবং হুগলিজেলার উদাহরণ তুলে কমিটির জানিয়েছে, উপরোক্ত সংখায়বহুপত্নী কুলীন তখন                        বিদ্যমান ছিলেন।

১৩। যে-নীতিপ্রথা ভিত্তি করে কৌলিন্য স্থাপন করা হয়েছিল, এবং বিশেষ বিশেষ শ্রেণীর মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল,            তা স্বেচ্ছায় অবহেলিত হয়ে চলেছে।

১৪। মেয়ের বিয়েয় কুলীন বরকে মোটা পণ দিতেই অনেক পরিবার ধ্বংশ হয়ে গেছে। বহুপরিবার পণ দিতে পারে না    বলেই তাদের মেয়ে অবিবাহিতা থেকে যান।  

১৫। শুধু পণের লোভে অনেক কুলীন বিয়ে করে বেড়ায়। বিয়ের পরে স্ত্রীর কী দশা কুলীন স্বামী খোঁজও পর্যন্ত নেন না। বিবাহিত জীবনের কোন দায়দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা তাদের নেই।   

১৬। পাপিষ্ঠ এবং প্রতিবেশী মিলে কুলীন বিবাহের কু-ফসল এমন ভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে ঢাকা দেয় যে পুলিশ পর্যন্ত অপরাধীদের সন্ধান পায়না। 

১৭। অগণিত স্ত্রীদের ভরনপোষণ, রক্ষণাবেক্ষণের কোন রকম ব্যবস্থা কুলীন স্বামী করেন না।  [দ্রষ্টব্যModern Hinduism by W. J. Wilkins, First publication 1887, Cosmo Publications, New Delhi, Reprint 1987, pp.188-190.]

           ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর দুই খন্ডের Indian Caste পুস্তকে  বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য জন উইলসন লিখেছেন যে, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের এক বিখ্যাত ব্রাহ্মণ পণ্ডিত তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, এক কুলীন ব্রাহ্মণ ৩৫০টা  বিবাহ করেছেন। তাঁর মতে বিয়ে পাগলা কুলীনদের ১০০ থেকে ১৫০টা বিবাহ মামুলি ব্যাপার। কমিটির উপরোক্ত রিপোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের আলোচ্য বিষয় ছিল। এমন বিব্রতকর তথ্য কমিটিরসামনে এসেছিল, কিন্তু তার বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়নি।

সেদিনের বিয়ে পাগলগণ সনাতন হিন্দু; সমাজের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। বাঙালী সমাজ তাঁদের মর্যাদাহানি বা লাঘবের কথা ভাবতেন না। [দ্রষ্টব্য Modern Hinduism by W. J. Wilkins, First publication 1887, Cosmo Publications, New Delhi, Reprint 1987, pp. 188-190.]

‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় শিশির কুমার ঘোষ লিখেছিলেন, “আমাদের দেশে যতটি প্রকাশ্য বেশ্যা আছে, অনুন্ধান করিলে জানা যাইবে যে তাহাদের মধ্যে শতকরা নব্বই জন বিধবা, বৈধব্য যন্ত্রণা সহ্য করিতে না পারিয়া বেশ্যা হইয়াছে। বিধবা বিবাহে জাতি কেন যায় বুঝিনা।”http://www.jessore.info/index.php?option=content&value=12

           রাজ্যে কৌলিন্যের সামাজিক লজ্জা লাঘবের সতর্ক পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি কলিকাতার কলেজ স্ট্রিটথেকে প্রকাশিত বিদ্যাসাগরের এক রচনাবলীতে দেখেছি, উপরোক্ত কমিটির সাত নম্বরেরলিপিবদ্ধ তথ্য“কুলীন বর এক দিনে তিন বা চার বিবাহ করেছেন”সঠিক মুদ্রিত হলেও “একদিনেতেইশ বিবাহ করেছেন এমন কুলীনের রেকর্ডও কমিটির সামনে এসেছিল”বিলোপকরাহয়েছে। বিদ্যাসাগর রচনাবলীপ্রকাশকেরএমন আচারণের উদ্দেশ্য কি?ইতিহাসের বিকৃতি সংশোধন করা, না ইতিহাসের পিণ্ডি চটকানো? আজকাল  নানা দিকে ইতিহাস সংশোধনের হুঙ্কার ধ্বনিত হতে শুনি। 

           কৌলিণ্যের নবগুণ—আচার, বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থদর্শন, নিষ্ঠা, তপস্যা এবং দান।[উপরোক্ত উপরোক্তবিদ্যাসাগর রচনা সংগ্রহ, পৃষ্ঠা ১৮১।]কনৌজেরপাঁচ ব্রাহ্মণ— ভট্টনারায়ণ, দক্ষ, শ্রীহর্ষ, বেদগর্ভ এবং ছান্দড়এই নবগুণসম্পন্ন ছিলেন। নৃতাত্ত্বিকঅনুসন্ধানকারীহার্বার্টরিসলে আচার শব্দে ceremonial purity এবং প্রতিষ্ঠা,reputation for purityসুচিতারজন্য খ্যাতবোঝাতে চেয়েছেন।[Herbert Risley, ICS, The Tribes and Castes of Bengal, Vol. I, Calcutta, Bengal Secretariat Press, 1891, p. 145.আসলে কৌলিন্যের নবগুণে সুচিতা ও বিশুদ্ধতারউপর বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

যোগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের লেখায় এক নতুন কুলীনের সংবাদ দিয়েছেন। তিনি পণ্ডিতরত্নী কুলীন, তাঁর নাম উমেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচিতিতে জানিয়েছেন–

“W. C. Bonnerjee, is foremost of the Radhiya kulins and the leading Advocates of the Bengal HighCourt. …..Mr. W. C.Bonnerjee is a member of the clan called Pandit Ratni or “the jewel of Pandits” and is lineally descended from his mother from the great Jagannath, theauthor of the Digest translated by Mr. Colebrooke….”[Jogendra Nath Bhattacharya, Hindu Castes and Sects, Calcutta, Thacker, Spink & Co., p. 42.]

“পণ্ডিতরত্নী” ডব্লু সি ব্যানার্জীরাঢ়ীকুলীন। মাতৃকুলে তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত জগন্নাথের উত্তরপুরুষ। উমেশচন্দ্র ব্যানার্জীএক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব; ভারত তাঁর প্রদর্শিত রাস্তায় প্রথাগত রাজনীতির পথে চলেছিল।  ১৮৮৫ সালে বোম্বে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা প্রসিডেন্ট।কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে এম এ এবং ডি এল পাশযোগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য নদীয়া কলেজ অফ পণ্ডিতের সভাপতিছিলেন। তাঁরপ্রায় তিন দশক পূর্বে ডঃ জন উইলসন বাঙলার কুলীন পাঁচ শ্রেণীর উল্লেখ করেছেনঃ যেমন ফুলে, খড়দহ, বল্লভী, সর্বানন্দী, এবংপন্ডিতরত্নী।তবে, বিদ্যাসাগর এবং বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জী পন্ডিতরত্নী কুলীন সম্পর্কে নীরব। 

ডঃ জন উইলসন তার বিশ বছরের সাধনা ও অনুসন্ধানে রচিত এবং ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত IndianCaste পাঠে জানা যায় যে বল্লাল সেনের এক ব্রাহ্মণী রক্ষিতা ছিল; ঐ উপপত্নীর গর্ভে জাত সন্তান ‘পন্ডিতরত্নী’ কুলীন উপাধিতে ভূষিতহন। তিনি সু-পন্ডিত ছিলেন। উইলসন আরও জানিয়েছেন যে, তখন বঙ্গে ৮০০ পণ্ডিতরত্নী পরিবার ছিল। উইলসনের কথায়,

“A Brahmani concubine of BallalaSena is said to have had a son who was agood pandit. BallalaSena made him the founder of this [Panditratni] Mela, now of 800 families.”

[Dr. John Wilson, Indian Caste, Vol. II, Times of India Office, Bombay, 1877, p. 206.]

বৈদ্যরাজারবিবাহবহির্ভূত পুত্রসুপণ্ডিতকে বঙ্গীয় সমাজের কোন কোনঅংশের কুলীন মেনে নিতে কি দ্বিধা ছিল? তাই জন্য কিপণ্ডিতরত্নী কুলীন সম্পর্কে সমাজে এক ব্যাপক অজ্ঞাত?স্মার্ত রঘুনন্দনের মতে বাঙলায় কলিকালেবৈদ্যজাতিশূদ্র।ব্রাহ্মণ নারী এবং শূদ্র পুরুষের ব্যাভিচারে জাত সন্তান কৌলিনত্বেঅভিসিক্তকি ভাবে?এই প্রশ্নে বুদ্ধিজিবীবীদের নীরবতা বিষ্ময়কর, এবং হাস্যকরও।    

১৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত এক কুলীন কাহিনী পড়েছিলাম। গল্পের কেন্দ্রদখল করে আছেন কুলীন পিতা-পুত্র এবং শ্বশুর। এক কুলীন অনেকগুলি বিবাহ করে বৃদ্ধ হলে, বিবাহের বাজারে তার চাহিদা তলানিতে নেমেছিল;তাই সমাজে বৃদ্ধ একেবারেইঅনাদৃত। বিখ্যাত সমাচার সুধাবর্ষণ লিখেছিল,

অনেকগুলি বিয়ে করে তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন বলে শেষ জীবনে শ্বশুরকুলে কুলীন তেমন আদর-সমাদর পান না। কাজলা-কাষ্ট-কুড়ম্ব গ্রামে যে বিয়ে কুলীন মশাই করেছিলেন, সেই পক্ষের কৃতী সন্তান অনেক খ্যাতি, সম্পত্তি অর্জন করে সুপরিচিতি হয়েছেন। আশ্রয়ের সন্ধানে কুলীন মশাই সেই পুত্রের বাড়ীতে গেলে পিতাকে পেয়ে কৃতীপুত্র সমাদরে আশ্রয় দিলেন। সেখানে কুলীনের সুখে-শান্তিতে বসবাসের ব্যবস্থার সব উপায় করে দেন। এমন সময় এক আশ্চর্য্য ঘটনা ঘটে। পুত্রটি “বিশ্বকর্মার ব্যাটা বিয়াল্লিশকর্মা” হতে পারেন নি, সবে মাত্র ১০-১২টি বিয়ে করেছেন। তন্মধ্যে “দামুড়হুদোমামদোপুর গ্রামের শ্বশুর এক পত্র পাঠালেন। পত্রের বক্তব্যঃ-

পরমকল্যাণীয়,

শ্রীযুক্ত মুখোপাধ্যায় বাবাজী পরম কল্যাণবরেষু,

“২৬ অগ্রহায়ণ বুধবার দিবসে তোমার এক নবকুমার হইয়াছে, ৮ বৈশাখ শনিবার তাহার অন্নপ্রাসনের দিন ধার্য করা হইয়াছে, বাবাজী তুমি পত্র পাঠ এখানকার বাটীতে আগমন করতঃ শুভকর্ম সম্পন্ন করিবা, আমি সমুদয় আয়োজন করিয়াছি ইতি।”

উক্ত বাবুজীবাবাজী এই পত্রখানি পাঠ করত তৎক্ষণাৎ অমনি আড়ষ্ঠ হইলেন, পরে আস্তে ব্যস্তে কর্তা মহাশয়ের নিকট আসিয়া কহিলেন, “বাবা, বাবা! হ্যাদে এক চমৎকার দেখো, দুই বৎসর হইল আমি অমুক স্থানের শ্বশুরবাড়ী গমন করি নাই, সে স্ত্রীকেও এখানে আনি নাই, আমার শ্বশুর এই পত্রে লিখিয়াছেন, অনুক দিবসে তোমার ছেলের ভাত হইবে, তুমি পত্র পাঠ এখানে আসিবে।

“এই বাক্য শ্রবণপূর্বকবৃদ্ধটি তখনি অমনি অম্লান বদনে কহিতেছেন, হাঃ হাঃ বাবা, হাঃ তার ভাবনা কি,কুলীনের ছেলে, চিন্তা কি, অমন হোয়ে থাকে, হোয়ে থাকে, কি বাবা তার আটক কি, তুমি এখনি যাবে, আমি সব উদ্যোগ এখন করিয়া দিই, এতো বড় ভারি নহে, তুমি ভাতের সময় সংবাদ পাইলে, এই যে বাবু, তুমি হইলে পর একেবারে তোমার পৈতার সময় আমি পত্র পাইয়াছিলাম আমি তাহাতে কিছুই মনে করি নাই। স্বচ্ছন্দে এখানে আসিয়া তোমার পৈতা দিলাম। কুলীনের কি, ওদিকে শ্বশুর যেমন কসুর করেন না, এদিকে তেমনি জামাই হইয়া কামাই দেওয়া উচিৎ হয় না।”  [বিনয় ঘোষ,সাময়িকপত্রে বাঙলার সমাজচিত্র ৩, তৃতীয়খণ্ড, সমাচার সুধাবর্ষণ পত্রিকা, প্যাপিরাস, কলিকাতা, জানুয়ারি ১৯৮০, পৃষ্ঠা ১৩৩-১৩৪।]

এমন কাহিনী সেকালে অনেক শোনা যেত।

ইতিহাসের পুনরাবৃতি ঘটে থাকে। নারী জীবনে এই অন্ধকার আবার যেন নেমে না আসে। সে হবে তাদের মহাদুর্দিন; তাই সদা সতর্ক থাকা দরকার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বাঙালী নারী জীবনের এই ঘোর অন্ধকার ইতিহাস বার বার স্মরণ  করা এক আবশ্যিক কর্তব্য।

নতুবা, হে বঙ্গবাসী! ইতিহাসের পুরাবৃত্তি ঘটে“History repeats itself.”সাবধান হোন।

অতুলকৃষ্ণ বিশ্বাস, সেবানিবৃত আই এ এস অফিসার এবং প্রাক্তন উপাচার্য, বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বিহার বিশ্ববিদ্যালয়, মুজফরপুর।

আপনার কেমন লাগলো?

Click on a star to rate it!

Average rating 5 / 5. Vote count: 1

No votes so far! Be the first to rate this post.

1 Comment

  1. উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালীদের উচ্চ বর্ণের কুলীন সমাজের মেয়ে/ মহিলাদের মর্মান্তিক বেদনাদায়ক বিবরণ জেনে স্তম্ভিত হলাম । ধিক্কার জানাই তৎকালীন পচনশীল সমাজ ব্যবস্থাকে।
    এই প্রসঙ্গে বর্তমানে ভারতের এবং অন্যান্য দেশের মুসলিম সমাজের বহু বিবাহ প্রথা, ইচ্ছা মতো তালাক, চারজন স্ত্রীদের একসাথে পালন পোষন, নিকাহ হালালা প্রথা, লাগামহীন সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ , মেয়ে শিশু ও কিশোরীদের খতনা প্রথা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *